বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ

বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ

1986 • 216 pages

Ratings1

Average rating4

15

এইটা রিভ্যুলুশন ২৪ পরবর্তী পঠিত প্রথম বই; সেই হিসেবে ৫৩ বছর আগের এই মাটির আরেক রিভ্যুলুশনের নায়কদের গতি-প্রকৃতি, উথান আর অন্তিম যাত্রা অবলোকন করে রোমাঞ্চকর একটা রিড উপহার দিতে লেখক ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
মুজিবের সৃষ্ট নিপীড়ক রাষ্ট্রকাঠামো বর্ননায় এটা সত্যি অনবদ্য, গত ষোল বছরে যেই ফ্যাসিজমের বিষমিশ্রিত বাতাস আমাদের গেলানো হতো, সেটার পালে হাওয়া লাগাতো মুজিবের এই ওভার-গ্লোরিফিকেশন, আশা করি এটার ন্যারেটিভ কিছুটা হলেও ওর দেবত্ব নামাতে, আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে যাওয়া ফ্যাসিজমের আইকনরূপী পুঁজের শাসনামলের ভয়াবহতা বুঝতে কাজে দেবে—এটাই প্রধান অবদান বলে মনে করি। এরপর জিয়ার পিরিয়ডে চলমান অটোক্রেটিক টেন্ডেন্সি আর জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সমালোচনাও ভারসাম্যপূর্ণ লেগেছে (যদিও এখানে আরো আলোচনার সুযোগ ছিলো)
বইটি নিয়ে ক্রিটিকেরও অন্ত নেই; অনেক বর্ননায় কোনোরকম সোর্সের বালাই নেই, মুজিবের বিরোধিতাকারীদের ক্লিনশিট দিয়ে তাঁদের বয়ানেই সুর মেলানোর চেষ্টা, মুজিবের অপোনেন্টদের (ইনক্লুডিং সর্বহারা, জাসদ) ত্রাস নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য বর্ননা নেই, কিন্তু তাদের দমনের কাহিনি আছে কঠোরভাবে। মুজিব হত্যা নিয়ে লেখকের অতিরঞ্জিত বর্ণনা প্রসঙ্গে (আন্ধা হাফিজ কনটেক্সট) তার কিলারগণই সমালোচনা করেছে; একই কথা জিয়া হত্যা নিয়েও, এরশাদ সংশ্লিষ্টতার জোড়ালো বর্ণনা থাকলেও তার বইয়ে অনুপস্থিত। (এতে অনেকেই মনে করতে পারেন: এরশাদ পিরিয়ডের জাস্টিফিকেশান উৎপাদনে মুজিব-জিয়া ব্যাশিংই তার লেখার অন্যতম উদ্দেশ্য, প্রধান দুই দলের আইকনদ্বয়ের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মনোভাব বাড়ানোর ইন্টেনশন তার কাজ করে থাকতে পারে।)
বইয়ের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সরলীকরণ ছিলো দৃষ্টিকটু, নিজ পছন্দসই কয়েকটা ঘটনাক্রম বর্ননা করেই কনক্লুশনে পৌছে গেছেন অথবা জাস্টিফিকেশানের চেষ্টা করেছেন। তিনি চাইলে ক্রসচেক এবং ব্যালেন্সড/নিরপেক্ষ জায়গা থেকে লেখার প্রয়াস বাড়াতে পারতেন, যেই এডভান্টেজের তিনি সদ্ব্যবহার করেন নি।

সবশেষে, সবাইকে পড়তে বলার ক্ষেত্র হিসেবে, দুটো বিষয়ে এটাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জনরায় ক্লাসিক পিস হিসেবে ধরে রাখবে বলে ধারণা করতে পারি, প্রথমত: লিখনশৈলী—দারুণ দুরন্ত, একদম ফিকশন পড়ার মতো (জেন-জি যাদের ইতিহাস বিষয়ক বই মাত্রই বোরিং, তাদের জন্য সুবিধাজনক বটে)
দ্বিতীয়ত, লেখকের অবস্থানগত প্রিভিলেজ: তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন জার্নালিজম চর্চার প্রেক্ষাপটে সবচে প্রমিনেন্ট ছিলেন, আর পরবর্তীতে মুজিব-ফারুক/রশিদ-জিয়া-এরশাদ সকল ক্যারেক্টারের সাথেই তার সরাসরি পরিচিতি ছিলো, এটা বায়াসনেসের প্রসঙ্গে যেমন ভয়ংকর দিক, আবার বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রেও সবচে সুবিধাজনক দিক; আই গেস লেখক তার সুবিধাজনক দিককেই কাজে লাগিয়ে সত্য বর্ণনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন; অন্তত কোনোটা নিয়ে কনক্রিট সাংঘর্ষিক আর্গুমেন্ট পাবার আগ-অব্দি এরকম ধারণা পোষন করতে পারি।

অগাস্ট ২১, ২০২৪

August 21, 2024Report this review