নিষাদ
1989 • 80 pages

Ratings2

Average rating4

15

Highlights: ১. একটা ভুল তো মানুষ দীর্ঘদিন করতে পারে না। এক সময়-না-এক সময় তার জ্ঞান হয়। সে বুঝতে পারে।২. মানুষের মস্তিষ্কের একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সে খুব যত্ন করে মনে করে রাখে, প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো মুছে ফেলে। যে টেলিফোন নাম্বারটি মনে করা দরকার সেটি মনে পড়ে না, অথচ প্রয়োজন নেই এমন টেলিফোন নাম্বারগুলো একের পর এক মনে পড়তে থাকে।৩. মিসির আলির খানিকটা মন খারাপ হল। এক দিন না এক দিন। এইসব রহস্যের সমাধান হবে, কিন্তু তিনি জেনে যেতে পারবেন না। মানুষ স্বল্পায়ু প্রাণী—এটাও একটা গভীর বেদনার ব্যাপার। এত বুদ্ধি নিয়ে সৌরজগতে যে প্ৰাণীটি এসেছে, তার কর্মকাল সীমাবদ্ধ। তিনি বাতি নিভিয়ে ঘুমের চেষ্টা করছেন-লাভ হচ্ছে না। বিচিত্র সব চিন্তা মাথায় আসছে। একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল নেই। আবার মিল আছেও। অদৃশ্য যে সুতোয় মিলগুলো গাঁথা, সে সুতোটির নাম অনন্ত মহাকাল–The eternity.৪. মুনির অবাক হয়ে লক্ষ করল, মিসির আলির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এই মানুষটির প্রতি গভীর মমতা ও ভালবাসায় মুনিরের হৃদয় আর্দ্র হল। পৃথিবীতে ভালোমানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু এই অল্প কজনের হৃদয় এত বিশাল, যে, সমস্ত মন্দ মানুষ তাঁরা তাঁদের হৃদয়ে ধারণ করতে পারেন।৫. মিসির আলি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন-মনে মনে বললেন, অদ্ভুত মানবজীবন। মানুষকে আমৃত্যু দ্বিধা এবং দ্বন্দ্বের মধ্যে বাস করতে হয়। তিনি নিজেও তাঁর জীবন দ্বিধার মধ্যে পার করে দিচ্ছেন। সমাজ-সংসার থেকে আলাদা হয়ে বাস করতে তাঁর ভালো লাগে, আবার লাগে না। মানুষের মঙ্গলের জন্যে তীব্র বাসনা অনুভব করেন। এক জন মমতাময়ী স্ত্রী, কয়েকটি হাসিখুশি শিশুর মাঝখানে নিজেকে কল্পনা করতে ভালো লাগে! আবার পর মুহূর্তেই মনে হয়–এই তো বেশ আছি। বন্ধনহীন মুক্ত জীবনের মতো আনন্দের আর কী হতে পারে? পুরোপুরি নিঃসঙ্গও তো নন। তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরির দিকে তাকালে মন অন্য রকম হয়ে যায়। সারি সারি বই। কত বিচিত্ৰ চিন্তা, কত বিচিত্র কল্পনার কী অপূর্ব সমাবেশ। এদের মাঝখানে থেকে নিঃসঙ্গ হবার কোনো উপায় নেই।৬. মুনির বাতি জ্বালালো। খাতা খুলে লিখল, মানুষের জীবন দুটি নয়। অনেক। হয়তোবা অসংখ্য।৭. অসীম ব্যাপারটা এমনই যে, এ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্যেই অসীম সংখ্যক জীবনধারা চালু করতে পারে। কারণ অসীম সংখ্যাটির এমনই মাহাত্ম্য যে, সে অসীমসংখ্যক অসীমকেও ধারণ করতে পারে। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ডেভিড হিলবার্ট অসীমের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর হিলবার্ট হোটেলের সমস্যায়। এই হোটেলটির সবচে বড়ো গুণ হচ্ছে, হোটেলের প্রতিটি কক্ষ অতিথি দিয়ে পূর্ণ হবার পরও যত খুশি অতিথিকে ঢোকান যায়। এর জন্যে পুরনো অতিথিদের কোনো অসুবিধে হয় না। কারো কক্ষে দু জন অতিথি ঢোকানোর প্রয়োজন হয় না। এটা সম্ভব হয় অসীম সংখ্যাটির অদ্ভুত গুণাবলীর জন্যে। মানুষ তার প্রচুর জ্ঞান সত্ত্বেও অসীমকে ব্যাখ্যা করতে পারছে না। সবচে সহজ ব্যাখ্যাটি হচ্ছে–অসীম হচ্ছে বিরাট বই, যার শুরুর পাতা এবং শেষের পাতা বলে কিছু নেই।৮. প্রকৃতির ব্যাপারটায় রহস্য এত বেশি যে, কোনো থই পাওয়া যায় না। এবং সবচেয়ে বড় মুশকিল কি জানো? আমরা নিজেরাও এই প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতির অংশ হয়ে সেই প্রকৃতিকে পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। তার জন্য প্রকৃতির বাইরে যেতে হবে। তা যেহেতু পারছি না, প্রকৃতির অনেক রহস্যই বুঝতে পারছি না।৯. সারা রাত বিনু এক ফোঁটা ঘুমুতে পারল না। বারান্দায় মোড়া পেতে বসে রইল। তার কাছে সব কিছুই কেমন অর্থহীন মনে হচ্ছে একটা জটিল রহস্যের আবর্তে সে পড়ে গেছে, এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ নেই। বারান্দা অন্ধকার। অনেক দূরে একটা স্ট্রীটল্যাম্প জ্বলছে। তার আলো যেন চারপাশের অন্ধকারকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।১০. মানুষের যে অংশ অসীমকে ধারণ করে অর্থাৎ মস্তিষ্কের সেই অংশ পুরোপুরি কাজ করে না বলেই সে জানে না। তার মস্তিষ্কের অংশমাত্র ব্যবহার করে, এটা তো আজ বিজ্ঞানীদের কাছে সত্য। মস্তিষ্কের একটি বিশাল অংশের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা নেই। কারণ সেই অংশটি সুপ্ত। কারো কারো ক্ষেত্রে সুপ্ত অংশ কিছুটা জেগে ওঠে। তার চারপাশের অসীম জগৎ সম্পর্কে সে কিছুটা ধারণা পেতে থাকে।

August 15, 2020Report this review