Ratings1
Average rating4
Reviews with the most likes.
কখনও বা কবির পাল্কি থামিয়ে একজন মুসলমান প্রজা কবিকে দুটো টাকা নজর দিলেন। কবি নিতে আপত্তি করলে তিনি বললেন, আমরা না দিলে তোরা খাবি কি করে?
একদম সত্যি কথা! রবীন্দ্রনাথ আশি বছর বেঁচেছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের চতুর্থ দশকটি সৃষ্টির প্রাচুর্যে, বৈচিত্র্যে এবং স্থায়িত্বের দাবীতে বিশেষভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই দশকে তিনি লিখেছিলেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালির মতো কবিতার বই, বিদায় অভিশাপ ও কর্ণ-কুন্তী-সংবাদের মতো কাহিনিকাব্য, অসংখ্য ছোটগল্প, এবং সর্বোপরি— ছিন্নপত্রাবলী! এক হিসেবে দেখতে গেলে, জীবনের চতুর্থ দশক থেকেই রবীন্দ্রপ্রতিভার প্রকৃত স্ফূরণ শুরু হয়েছিল। এবং তাঁর এই বিস্ময়কর আত্মবিকাশের প্রেক্ষাপটরূপে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করছে পূর্ববঙ্গের পল্লীঅঞ্চল। নদ-নদী-খালবিল। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত। মাঠ-প্রান্তর-রাস্তা-কৃষিক্ষেত্র। শুধু পেটের খাদ্য নয়, রবীন্দ্রনাথকে মনের খাদ্য জুগিয়েছিল এই অঞ্চলের প্রকৃতি, পরিবেশ, মানুষ। রবীন্দ্রজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল হিসেবে প্রমথনাথ বিশী এই শিলাইদহ-পর্বটিকেই চিহ্নিত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলতেন, তাঁর পেশা জমিদারি আর নেশা আশমানদারি। কলকাতার ঘিঞ্জি নাগরিক পরিবেশ থেকে যে তিনি এই আশমানদারি করার প্ররোচনা পাননি, এইকথা তো বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রমথনাথ বিশী শুধু বিষয়টিকে বিশ্লেষণই করেননি, আমাদের জানিয়েছেন অনেক জানা-অজানা-অর্ধজানা তথ্য। যেমন, “শিলাইদহ” নামটির উৎস হচ্ছে সেই অঞ্চলের জনৈক নীলকর সাহেব, যার নামের পদবি ছিলো “শেলী”। শেলী থেকে শিলাই। আমি জানতে পেরে আশ্চর্য হয়েছি, স্বাধীনতার আগে শিলাইদহ গ্রামটি ছিল নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত। আমার বাড়ি এই নদীয়া জেলাতেই, যদিও শিলাইদহ আজ চলে গেছে কাঁটাতারের ওপারে। বন্ধু জগদীশচন্দ্র বসুকে নিজের লেখা ছোটগল্প শোনাবার লোভ দেখিয়ে শিলাইদহ আসার আমন্ত্রণ জানাতেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার মানুষরা জেনে খুশি হবেন, কুষ্টিয়াতে প্রথম আলুচাষের প্রবর্তন করেন কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তার আগে ওই অঞ্চলের মানুষ আলু খেতে জানতেন না। আমি নিজেও জেনে খুশি হয়েছি যে, রবীন্দ্রনাথ এবং আমি, আমরা দুজনেই মীনরাশির জাতক। হাহা!
রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য রচনায় প্রবিষ্ট হয়ে আছে পূর্ববাংলার চিহ্ন। সমাপ্তি গল্পের মৃন্ময়ী, ছুটি গল্পের ফটিক, অতিথি গল্পের তারাপদ, পুরাতন ভৃত্য ও দুই বিঘা জমি কবিতার কেষ্টা ও উপেন, কিংবা ময়নাপাড়ার মাঠের কালো-হরিণ চোখের সেই বিখ্যাত মেয়েটি, এরা কেউই পুরোপুরি কাল্পনিক নয়। ঠিক যেমন কাল্পনিক নয় “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা” গানটির বিষাদবিলীন কথা ও সুর। কাল্পনিক নয় আরো অনেক কিছু। চলনবিলে সূর্যাস্তের সময় ঝপাঝপ দাঁড় ফেলতে ফেলতে দাঁড়ের তালে তালে ছোকরা মাঝিদের গেয়ে ওঠা গান—
যোবতী ক্যান্ বা করো মন ভারি? পাবনা থাক্যে আন্যে দেব ট্যাকা দামের মোটরি...
হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি,ছুটি নে কাহারো পিছুতে,মন নাহি মোর কিছুতেই, নাই কিছুতে।নির্ভয়ে ধাই সুযোগ-কুযোগ বিছুরি,খেয়াল খবর রাখি নে তো কোনো-কিছুরই।উপরে চড়িতে যদি নাই পাই সুবিধাসুখে পড়ি থাকি নিচুতেই, থাকি নিচুতে...