Jiya Jale: The Stories of Songs

Jiya Jale: The Stories of Songs

2018 • 199 pages

Ratings2

Average rating4

15

গুলজার আগে কবি, পরে গীতিকার। উপমা এবং রূপকের যে নিবিড় সৌকর্য তাঁর লেখা গানে পাওয়া যায়, তা শুধু একজন কবির পক্ষেই সম্ভব। আমাদের সবার জীবনের সঙ্গে খুব সম্পৃক্ত কোনো ঘটনাকে, যেমন ধরা যাক প্রেমে বিচ্ছেদ, তাকেও তিনি বাকি সব বিচ্ছেদের গানের চেয়ে অভিনব পঙক্তিতে লিখে ফেলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে সবার আগে মাথায় আসে আমার ভীষণ প্রিয় একটা গান : “মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়”। আর ডি বর্মন-এর সুরে এবং আশা ভোঁসলের গাওয়া এই গানটির শুধু লিরিক পড়লে মনে হবে যেন লয়হীন সাদামাটা একটা বিবৃতি পড়ছি। কোনো ছন্দমিল নেই, বিচ্ছেদের গানসুলভ কোনো তীব্র আবেগ নেই। অথচ গানটি যখন আমরা শুনি, মনে হয় এই কথাগুলি আমার নিজের কথা, গুলজার জানলেন কীভাবে? হিন্দি সিনেমার গানে আধুনিক গদ্যকবিতা ব্যবহারের এরকম উৎকৃষ্ট উদাহরণ বিরল।

গুলজারের গানের আরেকটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গানের মধ্যে একটি লক্ষণীয় ক্যাচলাইন বা ক্যাচফ্রেজ ব্যবহার করা, যেটি গোটা গানজুড়ে ধুয়োর মতো ঘুরেফিরে আসে এবং এই লাইনটি দিয়েই শ্রোতা গানটিকে চিহ্নিত করেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদাহরণ : ছাঁইয়া ছাঁইয়া, বিড়ি জ্বালাই লে, কাজরা রে, ধান তে নান (“কামিনে” সিনেমার গান), ইত্যাদি। যদিও যে-গানটি লেখার জন্যে তাঁকে অস্কার দেওয়া হয়েছে (“স্লামডগ মিলিয়নেয়ার” সিনেমার “জয় হো”), সেটা আমার একেবারেই পছন্দ নয়। গুলজারের এই ক্যাচলাইন বৈশিষ্ট্যটি যদিও তাঁর আগেকার গানে দেখা যায় না, এটি তাঁর নতুন উদ্ভাবন। যে বইটি নিয়ে আলোচনা করছি সেটা গুলজার এবং প্রখ্যাত হিন্দি সিনেমা অনুরাগী নাসরিন মুন্নি কবির-এর পারস্পরিক আলাপচারিতার লিখিত রূপ। আলাপের বিষয়বস্তু : গুলজারের লেখা গান এবং তাঁর কয়েকটি গানকে ইংরিজি ভাষায় রূপান্তরের প্রয়াস।

বইটি যতটা আশা নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম তা পুরোপুরি মেটেনি। মূলত তিনটে কারণে। প্রথম কারণটি নিতান্ত ব্যক্তিগত। আমি যেহেতু হিন্দি এবং উর্দু ভাষা বেশ ভালো বুঝতে পারি, তাই গানগুলোর ভাষান্তরিত রূপ আমার বিশেষ কাজে লাগেনি। মূল ভাষাতেই আমি গানগুলোর রসগ্রহণে সক্ষম। তাই এই ভাষান্তরের প্রক্রিয়াটি আমার কাছে প্রচণ্ড বিরক্তিকর লেগেছে। দ্বিতীয় কারণ, আলোচনা করার জন্যে গুলজারের অনেক মাঝারি এবং নিচুমানের গান বেছে নেওয়া হয়েছে (বিশেষ করে বইয়ের শেষ অর্ধে)। বেশ কয়েকটা গানের আমি নামই জানতাম না, শুনেও একেবারে পছন্দ হয়নি (যেমন রূপকুমার রাঠোরের গাওয়া “রোজ-এ-আওভল” নামের একটা গান। কী বুঝে এটাকে নেওয়া হয়েছে কে জানে। এরকম হাবিজাবি আরো আছে)। এগুলোর চেয়ে গুলজারের আলোচনাযোগ্য গানের সংখ্যা প্রচুর, সেগুলোকে বাদ দিয়ে অহেতুক এই পচা গানগুলো নিয়ে অনেক পৃষ্ঠা বরবাদ করা হলো ক্যানো বুঝলাম না।

তৃতীয় কারণটি হলো গুলজারের আদর্শবাদী কথাবার্তা। গুলজারকে আমি মুখ্যত কবি হিসেবেই মান্য করি, এবং কবিদের মুখে দেশদুনিয়ার ভালোমন্দ, দোষত্রুটি, কোনটা উচিত কাজ, কোনটা অনুচিত কাজ, এইসব নিয়ে ঘ্যানঘ্যান শুনলে ভালো লাগেনা। খবরের কাগজ খুললেও তো এই একই কথা পড়ি, হোয়াটসঅ্যাপের ফরোয়ার্ডেড মেসেজেও একই বক্তব্য, টিভির আলোচনাসভাতেও একই বকবক। গুলজারের মুখেও সেই ভাষণবাজি ভালো লাগেনি আমার। আমার কাছে কবিরা এসবের ঊর্ধ্বে। কবিরা কিছু বলতে চাইলেও আকারে-ইঙ্গিতে বলবেন, সরাসরি নয়। যেকোনো ভাষার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পরিবেশক হলেন কবিরা। এক জায়গায় দেখলাম গুলজার রীতিমত রেগে ফায়ার হয়ে গেছেন কারণ, ইন্টারনেটে প্রচুর নকল কবিতা তাঁর নাম লাগিয়ে সার্কুলেট করা হয় নিয়মিত। আমার মতো হরিদাস পাল যদি এইসব ফালতু বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতো তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু গুলজার?

বইটার ভালো দিকই বেশি যদিও। পুরোনো দিনের হিন্দি গানের জগৎ নিয়ে প্রচুর প্রচুর কৌতূহলকর তথ্য জানতে পেরেছি। সংগীতরচনার কলাকৌশলের খুঁটিনাটি স্বয়ং অশ্বের গুলজারের মুখ থেকে শুনতে পারা তো কম সৌভাগ্যের কথা নয়! তাঁর মতো একজন সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ এখনও গান লিখে চলেছেন, এটা আমাদের প্রজন্মের জন্যে একটা আশীর্বাদ। আরো একটি কারণে গুলজারকে আমি পছন্দ করি। আমিও তাঁর মতো উর্দু ভাষাটিকে খুব ভালোবাসি। “দিল সে” সিনেমার “দিল সে রে” গানটিতে একটা লাইন আছে : উও ইয়ার হ্যায় জো খুশবু কি তারাহ্ উও জিসকি জুবাঁ উর্দু কি তারাহ্ (সেই বন্ধু আমার, যেন এক সুগন্ধের মতো যার উপস্থিতি, যেন উর্দু ভাষার মতো সুন্দর যার কথা বলার ভঙ্গি...)। আহা কী উপমা! তিনি আরো অনেক বছর এরকম গান লিখুন, এটাই কামনা! রিভিউয়ের শেষে আমার প্রিয় দশটা গুলজারি গানের একটা তালিকা দিলে কি খুব বেমানান লাগবে? :p :p

- আপ কি আঁখো মে কুছ (সিনেমার নাম “ঘর”)
- দিল ঢুন্ডতা হ্যায় (ধীর লয়ের ভার্শনটা, সিনেমার নাম “মৌসম”)
- না জিয়া লাগে না (“আনন্দ”)
- সিলি হাওয়া ছু গয়ি (“লিবাস”)
- এক আকেলা ইস শহর মে (“ঘরাওন্দা”)
- তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোয়ি (“আঁধি”)
- শাম সে আঁখ মে নমি সি হ্যায় (জগজিৎ সিংয়ের গাওয়া গজল, অ্যালবামের নাম “মারাসিম”)
- চুপকে সে (“সাথিয়া”)
- দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি (“ইশকিয়া”)
- পেহলি বার মহব্বত (“কামিনে”)

April 6, 2024Report this review