Ratings1
Average rating3
Presents the original text of Shakespeare's play side by side with a modern version, with marginal notes and explanations and full descriptions of each character.
Reviews with the most likes.
বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত “ওমকারা” ছবিটি দেখার সুবাদে “ওথেলো”-র কাহিনি আগে থেকেই জানা ছিলো। কিন্তু শেক্সপিয়ারের সৃষ্টি তো শুধু কাহিনির ঘেরাটোপেই আটকে থাকে না। দুটো লাইনের ফাঁকে গুঁজে দেওয়া থাকে চিন্তার অদৃশ্য খোরাক। শুধু কাহিনি জানলেই ভদ্রলোককে পুরোপুরি চেনা যাবে না, তাঁর নাটক পড়াও একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন :
“ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে।”
এই অসুখটার নাম ঈর্ষা। ভুল হোক ঠিক হোক উচিৎ হোক অনুচিৎ হোক বোকামি হোক গাধামি হোক, অসুখ তো বটে। (ঈর্ষা তো অনেকরকম হতে পারে। ঈর্ষা বলতে এই রিভিউতে আমি যৌন-ঈর্ষা বুঝিয়েছি। শেক্সপিয়ারও তা-ই বুঝিয়েছেন)। এমন সময় আসে যখন ভালোবাসার দহন আর ঈর্ষার দহন একসঙ্গে জ্বলতে থাকে। দুটো শিখা আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না। ঈর্ষার রং দেওয়া হয়েছে সবুজ, যেটা বোধহয় ঠিক নয়। ঈর্ষার রং গনগনে লাল।
ওথেলো নাটকটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে এই ঈর্ষাকেই তুলে ধরা হয়েছে আবহমানকাল যাবৎ। আরো একটা বিষয় আছে এই নাটকে, যেটা প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কম আলোচিত। বেশি আলোচিত বিষয়টা নিয়ে আগে দু-চারটে কথা বলে নেওয়া যাক।
নাটকে ইয়াগো নামক একটি চরিত্র আছে যাকে খলনায়ক উপাধিতে ভূষিত করা হয়ে থাকে। আমার যদিও মনে হয়েছে, ইয়াগো আমাদের মনেরই একটা রূপক অংশ। আমরা নিজেদের যতই সাধুপুরুষ ভেবে, মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে, নিশ্চিন্তে বসে থাকার ভান করি না ক্যানো, আমাদের ভেতরের প্রত্যেকজন খলনায়ককে আমরা খুব ভালোভাবেই চিনি। চিনেও মুখ ঘুরিয়ে থাকি। পাখি, প্রজাপতি, ফুল, আকাশ... উদাসনয়নে এইসব দেখি। যতক্ষণ না সেই আকাশ আমাদের মাথায় ভেঙে পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত।
ইয়াগো তার মনিব ওথেলোর হৃদয়ে ছলে-বলে-কৌশলে ঈর্ষার বীজ বুনে দেয়। ওথেলো কি জানতো না তার বিবেচনায় ভুল হচ্ছে? সে যে ঈর্ষার দংশনে বুদ্ধিভ্রষ্ট হতে চলেছে, জানতো না? অবশ্যই জানতো। কিন্তু ঈর্ষা একটা অদ্ভুত বস্তু। সে আগেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। তারপর কারণ খোঁজা শুরু করে। শেষমেশ সে “কারণ” খুঁজে বার করবেই করবে। দরকার হলে কারণ ম্যানুফ্যাকচার করবে। তবু কারণ তার চাই-ই চাই! মনের ভেতর ঈর্ষা তার আগুন জ্বালিয়ে অপেক্ষা করে, আর মানুষ সেই অগ্নিতে নিজেই নিজেকে আহুতি দেয়।
Othello : Think on thy sins.(Think of your sins.)
Desdemona : They are loves I bear to you.(My only sin was loving you too much.)
আচ্ছা বেশ, এবার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাতে আসা যাক। তা হলো বর্ণবাদ (Racism)। নাটকের নায়ক ওথেলো একজন কৃষ্ণাঙ্গ। তাকে “moor” নামে অভিহিত করা হয়েছে নাটকে। তখনকার দিনে moor শব্দের অর্থ আজকের “আফ্রিকান” শব্দের প্রায় সমান। ওথেলো যদিও সমাজে একজন সম্মাননীয় পুরুষ, তবু তার উদ্দেশ্যে কালা আদমি (black man), কালা মূর (black moor), কালো ভেড়া (black ram), পুরু-ঠোঁট (thick-lips), এইসকল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ওথেলো-র স্ত্রী ডেসডেমোনা কিন্তু সম্ভ্রান্ত পরিবারের শ্বেতাঙ্গিনী কন্যা। বর্ণবাদের একটা অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মানসিক-শিরদাঁড়াটি বাঁকিয়ে দেওয়া। যাদের বর্ণবাদের শিকার হতে হয়, একটা সময় তারা সত্যিই নিজেদের হীন ভাবতে শুরু করে। অযোগ্য ভাবতে শুরু করে। এমনকি আজকের দিনেও বর্ণমিশ্রিত (interracial) বৈবাহিক সম্পর্ককে taboo হিসেবে ধরা হয়। (আমি এখন ভোরবেলা ছাদে বসে এই রিভিউটা লিখছি। হঠাৎ কানে আসছে একটা ছোট্ট টুনটুনি পাখি তারস্বরে ডাকছে। রবার্ট স্যাপোলস্কি-র লেখায় পড়েছিলাম, পাখিদের ডাক আমাদের কানে যতই মধুর শোনাক না ক্যানো, আসলে সেটা তাদের ঈর্ষাজনিত চিৎকার।) যাই হোক, যেটা বলছিলাম...। আজকের দিনেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে চারশো-কুড়ি বছর আগেকার সমাজে (“ওথেলো” লেখা হয়েছিল ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে) এই নাটকের সামাজিক অভিঘাত ক্যামোন হতে পারে?
ক্যামোন হতে পারে সেটা আন্দাজ করার জন্যে তখনকার নয়, বরং এখনকার সমাজ থেকে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন আপার্টহাইট জমানা চলছিলো, তখন সেখানে “ব্যাভিচার আইন” (Immorality act) নামের একটা কানুনি ব্যবস্থা ছিলো। কোনো কালো মানুষ যদি সাদা মানুষের সঙ্গে প্রেমজ-মেলামেশা করার সাহস দেখাতো, তখন সেই কালো মানুষটিকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হতো এই আইন মোতাবেক। এবার ঘটনা হলো, ১৯৮৭ সালে (এই তো, মাত্র ৩৫ বছর আগে!) দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন আপার্টহাইট ব্যবস্থা মধ্যগগনে, তখন জোহানেসবার্গ শহরের বিখ্যাত “মার্কেট থিয়েটারে” ওথেলো নাটকের একটি প্রযোজনা অভিনীত হয়।
জনৈক জন কানি, যিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, তিনি ওথেলোর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ডেসডেমোনার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জোয়ানা উইনবার্গ, যিনি একজন শ্বেতাঙ্গিনী। নাটকের অভিনয় শেষে ওথেলোর ভূমিকায় অভিনয়কারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের কারণ? “অ্যাতোজন সম্ভ্রান্ত শ্বেতাঙ্গ দর্শকের সামনে তুই মঞ্চে ডেসডিমোনাকে চুম্বন করেছিস! তাকে আলিঙ্গন করেছিস! দর্শকদের মুখ বিরক্তি আর ঘেন্নায় কুঁচকে গ্যাছে! এতবড় সাহস তোর হয় কীভাবে?? চল ব্যাটা তোকে মজা দেখাচ্ছি!”
এবার দুটো প্রশ্ন আমার মনে জেগেছে যাদের উত্তর আমি এখনও খুঁজছি। এক, তখনকার চরম বর্ণবাদগ্রস্ত সমাজে ওথেলো নাটকের অভিনয় কীভাবে সম্ভব হতো? ওথেলো নাটক লেখার পশ্চাতে শেক্সপিয়ারের প্রকৃত ভাবনাটি কী ছিলো? শুধুই ঈর্ষা নামক গরলের প্রদর্শন? নাকি অন্য কিছু? দুই, শেক্সপিয়ার কি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে ওথেলো যেহেতু হীন-মনোবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন, তার আত্মমর্যাদার অভাবই কি তার ঈর্ষার পিছনে আসল কারণ? ডেসডেমোনা যে তার কপালে জুটেছিলো, এটা কি সে হজম করতে পারেনি? মানুষ কি সেটাই হজম করতে পারে যেটা সে হজম করার যোগ্য? যোগ্যতার বাইরে কিছু প্রাপ্তি ঘটলেই কি তার হজমের গোলমাল দেখা দ্যায়?
Othello : Her name, that was as fresh as Dian's visage, is now begrimed and black as mine own face.(Her reputation was as pure as the snow, but now it's as dirty and black as my own face.)
আমার কথাটি ফুরলো (আরো অনেক কথা ছিলো, কিন্তু জায়গা কোথায়?), এবার নটে গাছটা মুড়িয়ে দেবার আগে আমি যে সংস্করণটি পড়েছি তার ব্যাপারে সামান্য কিছু কথা বলা জরুরি। আমি “No Fear Shakespeare” সংস্করণ থেকে এই নাটকটা পড়েছি। এই সংস্করণগুলোর বিশেষত্ব হলো, বাঁ-দিকের পৃষ্ঠায় মূল নাট্যাংশ দেওয়া থাকে, ডানদিকের পৃষ্ঠায় থাকে সেই নাট্যাংশের আধুনিক ইংরিজি “অনুবাদ”। এলিজাবেথীয় যুগের ইংরিজি ভাষা এবং প্রাক-আধুনিক ইংরিজি সাহিত্য বিষয়ে যারা আমার মতো “বিশেষ-অজ্ঞ”, তাদের কাছে এই সংস্করণগুলো একটা আশীর্বাদ-স্বরূপ, এই কথা তো বলাই বাহুল্য। তাছাড়া, একইসঙ্গে দুবার পড়া হয়ে যায় নাটকটা। এই কারণে এটা শেষ করতে সময়ও বেশি লেগে গ্যালো আমার।
দু'হাত দিয়ে আড়াল করা আলোর শিখাটুকুযখন তখন কাঁপার মতন তুমি আমার গোপন,তার ভেতরেও ঈর্ষা আছে, রেফের মতনতীক্ষ্ম ফলাছেলেবেলার মতন জেদীএদিক ওদিক তাকাই তবু মন তো মানে নাভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে।