Ratings1
Average rating4
“মাঝে মাঝে লোকজনকে বেদম গাল দেবার জন্যে ভেতরটা চিড়বিড় করে ওঠে।”
কিন্তু সরাসরি গালিগালাজ করা তো সম্ভব নয়। ভেতরটা চিড়বিড় করে উঠলেও নয়। কারণ, একটা কথা আমরা সব্বাই মেনে নিয়েছি। যে-নর্দমায় আমরা বাস করি তার পোশাকি নাম “সভ্য সমাজ”। সভ্য সমাজে বাস করে একে-অপরকে গালিগালাজ করা যায় না, স্যার। কিন্তু... একটা কাজ করা যায়। একটা আয়না খাড়া করা যায় মানুষের সামনে। মানুষ তো নিজেরাই গালিগালাজ করে চলেছে অহরহ। তাদের সামনে যদি একটা আয়না রাখা যায়, তাহলে মাছও খাওয়া হবে, গলায় কাঁটাও ফুটবে না।
Vox populi, vox Dei. (জনতার কন্ঠ মানেই ঈশ্বরের কন্ঠ)
আহা, এমন একখান খাসা কথা দিয়ে শুরু করলেন তাঁর অভিধান। এমন একটি অভিধান, যেখানে নাকি তিনি সংগ্রহ করেছেন “প্রচলিত ধ্যানধারণা”-কে। “প্রচলিত ধ্যানধারণা” মানে? মানে সেই আয়নাটা, যার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজেই নিজেদের গালি দেয়। জিজ্ঞেস করলে বলে, কেমন চুপ করিয়ে দিলাম বলো আয়নাটাকে? হুঁ হুঁ বাবা, চালাকি নয়, আমার নাম “জনতা”। আমার কন্ঠ মানেই ঈশ্বরের কন্ঠ। (গর্বের হাসি)
পুরোনো জিনিস (অ্যান্টিক) - আরে, ওগুলো সব হালে তৈরি !
শিল্প - কী কাজে লাগে বলুন? আজকাল তো যন্ত্রে ‘আরো ভালো ও দ্রুত' কাজ পাওয়া যায় !
হাই - হাই তুলেই বলতে হবে : ‘ইয়ে, মাপ করবেন, এটা বিরক্তি থেকে নয়, হজমের অসুবিধে থেকে'।
দাড়ি - গায়ের জোরের বাহ্যিক প্রমাণ। যারা দাড়ি রাখে তাদের গায়ের জোর বেশি। এবং তারাই প্রকৃত পুরুষ। বাকিরা সব মেয়েছেলে।
যুদ্ধ - সর্বদাই দুজন বিজয়ী হয় : বিজয়ী ও বিজেতা।
জন্তুজানোয়ার - অনেকেই মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান !
সোনালি চুলের নারী (ব্লন্ড) - কালো চুলদের চেয়ে ‘উষ্ণ'।
কালো চুলের নারী (ব্রুনেট) - সোনালি চুলদের চেয়ে ‘উষ্ণ'।
ঝি (কাজের লোক) - ঝি মাত্রেই বজ্জাত !
বৌদ্ধধর্ম - ‘ভারতবর্ষের নকল ধর্ম'।
গ্রাম - সেখানে শৌচাগার নেই, সুতরাং কাপড় তুলে—
সারল্য - সব সময়ই ‘মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো'।
ডাক্তারির ছাত্র - মড়ার পাশে খায়, মড়ার পাশে শোয়। কেউ কেউ মড়া খায়।
দুঃস্বপ্ন - পেট থেকে উৎপত্তি।
সেলিব্রিটি - এদের সম্পর্কে ঠেস দিয়ে কথা বলতে হবে। এদের ব্যক্তিগত ছিদ্রান্বেষণ করতে হবে।
অকৃতদার - কী দুঃখের জীবন এদের !
শ্যাম্পেন - ওটা তো পান করা হয় না, ‘গেলা' হয়।
চুল - ধুর, পরচুলা !
শল্যচিকিৎসক - এদের ‘কশাই' বলে ডাকতে হবে।
ক্লাসিক - সব্বাই পড়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
অসতীর স্বামী - প্রত্যেক স্ত্রীর উচিত স্বামীকে চুতিয়া বানানো।
সংকলন (compilation) - এর চেয়ে সহজ বই লেখা আর হতে পারে না।
আরাম (comfort) - অমূল্য আধুনিক আবিষ্কার।
কোষ্ঠকাঠিন্য - লেখাপড়া জানা লোকমাত্রেরই এটা থাকে।
মিলন - অশ্লীল কথা !
শরীর - আমাদের শরীরের ভেতরটা যে কীভাবে তৈরি, জানা থাকলে নড়াচড়া করতে ভয় পেতাম।
বেশ্যা - আমাদের মেয়ে-বোনেদের রক্ষা করে, যতদিন তারা অবিবাহিত।
সমালোচক - সর্বদাই ‘খ্যাতনামা'।
৭৮ পৃষ্ঠার বই। মাত্র ৩৬ পৃষ্ঠা চলছে। এভাবে চললে রিভিউ অনেক বড় হয়ে যাবে। আচ্ছা, এবার শেষের দিক থেকে কয়েকটা খুঁজে বের করি, কেমন?
ওষুধ - যখন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তখন এটা নিয়ে ঠাট্টা করতে হবে।
বিষণ্নতা - উচ্চ মন আর বিশিষ্ট হৃদয়ের লক্ষণ।
ভোরে ওঠা - কেউ যদি ভোর চারটায় শুয়ে সকাল আটটায় ঘুম থেকে ওঠে তবে সে কুঁড়ে। কিন্তু কেউ যদি রাত নটায় শুয়ে ভোর পাঁচটায় ওঠে, তবে সে খুব কাজের লোক।
লেবেনচুষ - কেউ জানে না কী দিয়ে তৈরি !
জঘন্য - ‘জঘন্য !'
ইঞ্জিনিয়ার - এরা সর্বজ্ঞানের অধিকারী।
গালি দেওয়া - কী মিষ্টি কথা !
সাফল্য - ঘুম ছুটিয়ে দেয়।
রোগী - রোগীর মনোবল বাড়াতে হলে তার অসুখটিকে নিয়ে হাসাহাসি করতে হবে ও তার যন্ত্রণাকে অস্বীকার করতে হবে।
অঙ্ক - হৃদয়ের রস শুষে নেয়।
নিগ্রো - ওদের থুতুর রং সাদা, এটা কী করে সম্ভব হল?!
নিসর্গচিত্র - কয়েক থালা শাকসবজি !
চিন্তা করা - কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
প্রগতি - এত দ্রুত হয়েছে যে লোকে ধরতেই পারেনি।
ভগবান - তাঁকে ছাড়া আমাদের চলবে কী করে?
ওহ, হাঁফিয়ে গেছি। আর না।
বলতে ভুলেই যাচ্ছিলাম ! এই অভিধানটি সংকলন করেছেন মাদাম বোভারি-র লেখক গুস্তাভ ফ্লবের। আমার কাছে যেটা আছে সেটা চিন্ময় গুহ-র করা বাংলা অনুবাদ। চমৎকার অনুবাদ করেছেন। বইটা নাড়াচাড়া করতে মাঝেমাঝে কেমন যেন ইয়ে লাগে। “কিছু কিছু বাক্যের সঙ্গে নিজের বক্তব্য হুবহু মিলে যায় !” আমিও তো একজন জনতা।
বলদ - বাছুরের বাপ। ষাঁড় হল গিয়ে তার কাকা।