নাহ, সব মিলিয়ে ভালো লাগলো না। ইয়াং-অ্যাডাল্ট ঘরানার সাহিত্যের সঙ্গে আমি খুব বেশি পরিচিত নই। স্যালি রুনির নাম শুনতে পাই অনেক, তাই নেহাত কৌতূহলের বশে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম। লেখিকার গদ্যশৈলী মন্দ নয়, গল্পটাও মোটামুটি চলনসই, কিন্তু তবু... শেষ পর্যন্ত underwhelming মনে হলো।
সংস্কৃতির (এবং হয়তো জেনারেশনেরও) ভিন্নতার কারণে কিনা জানি না, এই কাহিনির চরিত্রদের সঙ্গে আমি একাত্মবোধ করতে পারিনি। বড্ডো নকল লেগেছে পুরো ব্যাপারটা। ইশকুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের জীবনযাপন, কথাবার্তা, হাবভাব, যেমনটা দেখানো হয়েছে, আয়ারল্যান্ডে কি মাত্র ১৮/১৯/২০-বছর বয়সেই সবাই এরকম বুড়োমার্কা হয়ে যায়? আর যদ্দুর বুঝলাম, সেই দেশে কোনো কুসুমেরই মন নাই, শুধু শরীর, শরীর।
গল্পের কিছু বিষয় কিন্তু সামাজিকভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অল্পবয়েসি সিঙ্গল-মাদার, টক্সিক/অ্যাবিউজিভ/ম্যানিপুলেটিভ সম্পর্ক (রোমান্টিক কিংবা ডোমেস্টিক— দু রকমই), কিশোর বয়সের যৌনতা, একাকীত্ব, alienation, সেলফ-ডাউট, এরকম বেশ কিছু দরকারি জিনিস উঠে এসেছে। কিন্তু খিচুড়িতে কিছু-কিছু সবজি ভালো করে সেদ্ধ হয়নি। আবার কিছু-কিছু সবজি বেশি সেদ্ধ হয়ে গেছে।
বইটা পড়ছি জানতে পেরে হারুন আমাকে মেসেজ করে বললো, বইটা শেষ হওয়ার পরে আমার মুখ দিয়ে প্রথম যে শব্দটা উচ্চারিত হবে সেটা যেন তাকে জানাই।
আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারিত হয়নি। শেষের কয়েকটা লাইন বারতিনেক পড়লাম। কিছুই বেরোলো না মুখ দিয়ে। আমি একদম নির্বাক।
হ্যাডলি চেইজ পড়িনি কখনও। এই বইটার নাম শুনেছিলাম কোথাও। রেলস্টেশনে দেখতে পেয়ে কিনলাম। কিন্তু খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাইনি সেদিন। একটা গুরুগম্ভীর বই নিয়ে বসেছিলাম আজকে দুপুরবেলা। কিন্তু পাড়ার দুর্গাপূজার মণ্ডপ থেকে ভেসে আসা বাজনার আওয়াজে সেই বই পড়া ভন্ডুল হয়ে গ্যালো। গুরুগম্ভীর বই বন্ধ রেখে এটা পড়লাম।
প্রবল ঢাকের আওয়াজ, মাইকে লতা মঙ্গেশকরের আওয়াজ সত্ত্বেও বইটা দিব্যি শেষ করতে পারলাম। এই জন্যে একটা তারা। শেষ দশ পৃষ্ঠার আগে পর্যন্ত রীতিমত টেনে ধরে রেখেছিলো গল্পের রহস্য। সেই জন্যে আরেকটা তারা। আর কোনোদিন পড়বো হ্যাডলি চেইজ? না। এটা উপলব্ধি করানোর জন্যে বাকি তিনটে তারা কেটে নিলাম।
সবাইকে শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা!
(সাড়ে-তিন তারা)
এই ক্ষুদ্রকায় উপন্যাসটা যখন লেখা হচ্ছিলো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি। উপন্যাসটির বিষয়বস্তুর সঙ্গে যুদ্ধের যোগসূত্র আছে বটে, কিন্তু এই কাহিনি আদৌ যুদ্ধকেন্দ্রিক নয়। প্রথমেই যে-বিষয়টা জানতে পেরে অবাক লেগেছে, বইটি লেখার সময় লেখিকার বয়স ছিলো মাত্র ২৪ বছর। এই বয়সে এত পরিণত উপন্যাস লেখা কীভাবে সম্ভব? এবং এত গভীর বিষয়বস্তুকে নিরীক্ষা করাও কীভাবে সম্ভব? লেখিকার প্রথম উপন্যাস এটি।
ক্রমাগত বোমাবর্ষণের অভিঘাতে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একজন সৈনিক। সেই সময়কার ভাষায় যাকে বলে shell-shocked হওয়া। তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন, কিন্তু বিগত পনেরো বছরের ঘটনাক্রমের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছেন। ভুলে গেছেন দীর্ঘদিনের বিবাহিত স্ত্রীর কথা। মৃত পুত্রসন্তানের কথা। তাঁর শুধু মনে আছে পনেরো বছর আগেকার এক হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকার স্মৃতি। সেই “কিশোরী” প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। প্রেমিকা যদিও এখন বিবাহিত এবং বিগতযৌবনা।
একজন স্মৃতিভ্রষ্ট পুরুষ এবং তাঁকে ঘিরে তিনজন নারীর মানসিক পরিস্থিতির গল্প এটি। ইংল্যান্ডের অপরূপ গ্রাম্য পরিবেশের পটভূমিকায় আর্থসামাজিক শ্রেণিব্যবস্থা, ভালোবাসা এবং বিষাদের গল্প এটি। অদ্ভুত লিরিক্যাল ভাষায় লেখা এই উপন্যাসটি পড়বার সময় অখণ্ড মনোযোগের প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু অনুচ্ছেদ দুবার পড়ে দেখতে হয়। তাড়াহুড়ো করলে অসুবিধে হয়। শেষ পৃষ্ঠা উল্টে ফেলার পরে পাঠকের মনে কিছু প্রশ্ন দেখা দ্যায়। আমরা সবাই কিছু-না-কিছু ভুলে যেতে চাই।
One forgets only those things that one wants to forget.
ক্যানো ভুলে যেতে চাই আমরা জীবনের সেই ঘটনাগুলো?
573 Books
See all