Ratings1
Average rating2
অন্নদাশঙ্কর রায় ছিলেন ইংরেজ আমলের সিভিল সার্ভেন্ট। অবিভক্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি প্রশাসনের দন্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে কর্মজীবন কাটিয়েছেন। কাজের সূত্রে মিশেছেন ধনী দরিদ্র সাধারণ অসাধারণ নানারকম মানুষের সঙ্গে। কিন্তু সেই মেলামেশা “সমানে সমানে” মেলামেশা নয়। উত্তমর্ণের সঙ্গে অধমর্ণের মেলামেশা। অন্নদাশঙ্কর সাহিত্যচর্চা করতেন। তাই প্রশাসনিক কর্তব্যের বাইরেও নিজের লেখালিখির জন্যে উপাদান খুঁজতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর ছোটোগল্পগুলোকে ঠিক “গল্প” বলতে পারছি না। কর্মজীবনের বিবিধ অভিজ্ঞতাকে তিনি গল্প নামে চালিয়েছেন। শুধু পাত্রপাত্রীর নামধাম পাল্টে নিয়েছেন।
গল্পগুলো আমার ভালো লাগেনি। নিজের অভিজ্ঞতাকে সরাসরি আশ্রয় করে গল্পরচনা দোষের নয়। কিন্তু গল্প শোনাবার অছিলায় নিজস্ব রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বিশ্বাস পাঠকের হৃদয়ে ট্রান্সফার করতে চাইলে বিরক্তি লাগে। গল্পের ভেতরে কিছু-একটা “বার্তা” কিংবা “দর্শন” কিংবা “শিক্ষা” ঢুকিয়ে দিলেও বিরক্তি লাগে। গল্পের প্লট আগে, নাকি “বার্তা” আগে? আমার কাছে সবসময়ই প্লট আগে। প্রতিষ্ঠিত ছোটোগল্পকার বনফুলও তাঁর নিজের ছোটোগল্পের ভেতরে “শিক্ষা” ঢুকিয়েছেন, কিন্তু সেইজন্যে প্লটকে তিনি হেলাফেলা করেন নি। অন্নদাশঙ্করের গল্পে বাঁধুনি নেই, বৈচিত্র্য নেই, কাঠামো নেই। তাছাড়া, “বাংলাদেশটাকে থালায় করে তুলে দেওয়া হলো মুসলমানদের হাতে“— একজন প্রাক্তন প্রশাসক, যিনি দীর্ঘদিন পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কাজ করেছেন, তাঁর মুখে যদি এমন কথা শুনতে হয়, তাইলে কেমন লাগে?