Alcestis
-438 • 142 pages

Ratings3

Average rating4.3

15

প্রাচীন গ্রীক নাট্যকার ইউরিপিদেস-এর নাটক আলসেস্তিস। যদিও ট্র্যাজেডি নাটক হিসেবে স্বীকৃত, অনেকেই একে ট্র্যাজিকমেডি বলেও অভিহিত করেন। ট্র্যাজিক নাটকে সচরাচর যা হয়, আপাত চোখে একজন নায়ক-যিনি ভালোমানুষীর প্রায় সকল গুণ নিজের মাঝে ধারণ করেন-তিনিই হঠাৎ ছোটখাটো কোন দোষ/ ত্রুটির কারণে স্বর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত হন বিড়ম্বনার আস্তাকুঁড়ে। এ ধরণের প্রাচীন ট্র্যাজিক নাটকে নায়কের ভিলেনে পরিণত হওয়া, কিংবা ভাগ্যের সুদৃষ্টি থেকে ছিটকে পড়া-ইত্যাদি বিবিধ রকম পতনের পেছনে নাট্যকারেরা সাধারণত দেবতার ষড়যন্ত্র বা লীলাখেলাকে দায়ী করেন, যেমনটা আমরা সফোক্লিসের ইডিপাস সাইকেল-এ দেখতে পাই। আলসেস্তিসকেকে ট্র্যাজিকমেডি বলার কারণ এই নাটক চিরাচরিত গ্রীক ট্র্যাজেডির উল্টোরথ; এ নাটক শুরু হয় নায়কের দুর্দশা দিয়ে, এবং শেষ হয় নায়কের প্রাপ্তিতে। নাটকের মধ্যপথে কিছু “কমেডি” দৃশ্যের সাথেও আমাদের পরিচয় ঘটে। ট্র্যাজেডি না ট্র্যাজিকমিক-সে নিয়ে গ্রীক নাটকের পণ্ডিতেরা একে অপরের চুল ছিঁড়তে থাকুন, সাধারণ পাঠক হিসেবে আমার কাজ শুধু দূর থেকে এঁদের দেখা আর পপকর্ণ চিবোনো।

ইউরিপিদেস সফোক্লিসের সমসাময়িক ছিলেন, এবং তাঁরা একাধিকবার প্রতিযোগীতায়ও নেমেছিলেন। বস্তুতঃ আলসেস্তিস-এর জন্য ইউরিপিদেস দ্বিতীয় হন এমনই এক প্রতিযোগীতায়; প্রথম পুরষ্কারটি জেতেন সফোক্লিস। খ্রীষ্টপূর্ব ৪৩৮ সালে, অর্থাৎ, আজ হতে ২৪০০ বছরেরও বেশী আগে লেখা এই নাটক খুব যে নতুন কিছু শেখায় আমাদের, তা নয়। নাটকের মূল গল্পটিও ইউরিপিদেস-এর নিজস্ব কোন উদ্ভাবন নয়। নাটকের মূল যে প্রস্তাবনা, গত ২৪০০ বছরে স্থান-কাল-পাত্রভেদে তার বিভিন্ন ব্যখ্যা মানুষ দাঁড় করিয়েছে। অন্তর্জাল ঘাঁটলে এই নাটকের অনেকরকম ওস্তাদী ব্যখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়। শনিবারের দুপুরগুলোয় বাবা কেন চাকর বা বউ-শ্বাশুড়ির চিরাচরিত দ্বন্দ্বময় বাঙলা সিনেমা দেখে আসা আমার কাছে আর সবকিছু ছাপিয়ে বউ বড় না বাবা বড়-এই দ্বন্দ্বই মুখ্য হয়ে থাকলো। ইউরিপিদেস একটি পৌরাণিক কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে আলসেস্তিস নাটকটি লেখেন-যেমনটি তিনি তাঁর অন্য আরো বেশ কয়েকটি নাটকের ক্ষেত্রেই করেছেন। ইউরিপিদেস-এর নাটকটি পুরোপুরি বুঝতে চাইলে পৌরাণিক গল্পটি আগে জানা থাকলে ভালো। সংক্ষেপে গল্পটি তাই নিচে টুকে রাখলামঃ

ইওলকাসের রাজা পিলিয়াস তাঁর সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা আলসেস্তিস-এর বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেনঃ যে ব্যক্তি তাঁর রথে একইসাথে একটি সিংহ এবং একটি ভালুক জুড়তে পারবেন তাঁর সুযোগ্য হাতেই আলসেস্তিসকে তিনি তুলে দেবেন। ফিরি'র (phere) রাজা অ্যাডমেটাস এই প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হন। অ্যাডমেটাস যে একেবারে হেসেখেলে ভালুক-সিংহকে একঘাটে জল খাওয়ালেন তা-ও নয়; তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেন ধনুর্বিদ্যা ও সংগীতের দেবতা অ্যাপোলো, যিনি স্বর্গ থেকে এক বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছেন। এই এক বছর অ্যাপোলোকে অ্যাডমেটাসের অধীনে তাঁর মেষপালক হিসেবে কাজ করতে হয়, এবং সে দায়িত্বের অংশ হিসেবেই তিনি অ্যাডমেটাসকে আলসেস্তিস-এর পাণি জেতার প্রতিযোগীতায় সাহায্য করেন। অ্যাডমেটাস খুশীমনে আলসেস্তিসকে বিয়ে করলেন বটে, কিন্তু বিয়ে নামক এ মহাযজ্ঞের হুটোপাটিতে তিনি দেবী আর্টেমিসের উদ্দেশ্যে দেয় বলী'র কথা বেমালুম ভুলে গেলেন। দেব-দেবীর রাগ বড় কঠিন; অ্যাডমেটাসের ওপর মৃত্যুর অভিশাপ নেমে এলো বলীদানের কথা ভুলে যাওয়ায়। আবারো অ্যাডমেটাসের সাহায্যে এগিয়ে এলেন অ্যাপোলো। তিনি কৌশলে ভাগ্য রচনাকারী ফিউরিস ভগ্নীত্রয়ীকে (ক্লথো, লাখেসিস, ও অ্যাট্রোপোস) মদ খাইয়ে একটি চুক্তি করিয়ে নিলেন। অ্যাডমেটাসের পরিবর্তে তাঁর পরিবারের অন্য যেকোন সদস্য যদি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলেই প্রাণে বেঁচে যাবেন অ্যাডমেটাস। বৃদ্ধ বাবা-মা'র কাছে গিয়ে অ্যাডমেটাস এবার তাঁদের যেকোন একজনকে স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে বলেন, কিন্তু তাঁরা কেউই এতে রাজী হন না। মৃত্যুচিন্তায় তরুণ অ্যাডমেটাস যখন পাগলপারা, তখন তাঁর স্ত্রী আলসেস্তিস স্বামীর প্রাণরক্ষায় স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন।

ইউরিপিদেস তাঁর নাটক শুরু করেছেন আলসেস্তিসের মৃত্যুশয্যায়। অ্যাডমেটাস ও তাঁর সন্তানদের থেকে শুরু করে প্রাসাদের দাস-দাসী, রাজ্যের জনগণ-সবাই-ই আলসেস্তিসের শোকে কাতর। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আলসেস্তিসও স্বামীর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর অ্যাডমেটাস আর কখনোই যেন বিয়ে না করেন (রাজা-রাজড়াদের প্রতিশ্রুতি-তার কতখানি দাম সে আমরা সক্কলেই জানি)। মৃত্যুপথের যাত্রী স্ত্রীকে স্বান্তনা ও প্রতিশ্রুতি দেবার ফাঁকে ফাঁকেই অ্যাডমেটাস তাঁর বাবা ফিরেস (Pheres)-কে বকাঝকা করে আসেন, কেন তিনি এই বুড়ো বয়েসে বেঁচে থাকার গোঁ ধরে আছেন, তিনি মরে গেলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়; অ্যাডমেটাসের কমবয়েসী কচি বউটাকে মরতে হয় না। ফিরি নগরীর প্রতিষ্ঠাতা ফিরেস তাঁর পুত্র অ্যাডমেটাসকে কে দয়া করে রাজার সিংহাসনে বসিয়েছে তা মনে করিয়ে দিয়ে পাল্টা ধমক দিয়ে বলেনঃ

“খামোশ! কার লগে কথা কইতাছত, সেই হিসাব রাখছত?
আমারে কি তর বাজার থিকা কিনা বান্দীর পোলা ভাবছত?
তুই কি ভুইলা গেছত কুন ফেমিলির পোলা আমি?
যেই কমোডে বহি আমি, আন্দাজ আছে তর, ঐডা কত দামী?
আবে হালায় তরে তো পয়দা দিছি আমিই বে
তর লিগা হুদাই আমি জান দিবার যামু ক্যা?
বাপের জন্মে এমুন কথা হুনিনিকা হালায়,
নিজে বাঁচনের লিগা পোলায় বাপের জান এক্সচেঞ্জ করবার চায়!
টেগা-পয়সা, জমি-জিরাত, মাইয়া-পোলা, বাদ রাখছি কি?
যখন যা চাইছত, খোদার কসম, দুই হাতে বিলাইছি।
কোন মুখে তুই আমারে কস, “এইবার আপনে মরেন, বস”!
লম্বা টাইম বাঁইচা বহুত মজা লইবি-এইডা কি তর একার মনেই চায়?
আমি হালায় বুড়া হইছি, মাগার ইমানে কই, যন্ত্র ভি আমারো __”

February 8, 2022Report this review