A Brief History of Information Networks from the Stone Age to AI
Ratings10
Average rating3.7
মোবাইলে একটা ছবি এডিট করার ক্ষমতা নেই যার (করলেও সেই ছবির অবস্থা হয় একইসঙ্গে ভৌতিক এবং হাস্যকর), সেই আমি যদি AI-এর মতো আধুনিক সফিস্টিকেটেড তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করি, তাহলে কি মানায়? কিন্তু কী আর করা যাবে, জমানা যেদিকে এগোচ্ছে, একটু আধটু খবর না-রাখলে তো চলে না। ইউভাল নোয়াহ হারারির বইটা যদিও এতকিছু ভেবেচিন্তে কিনিনি। বরাবর এই লেখকের বই পড়তে ভালো লাগে, জানতে পারলাম তাঁর নতুন বই বেরিয়েছে, তাই কিনেছি। তো এই দফায় হারারির আলোচনার বিষয়বস্তু : A brief history of information networks from the stone age to AI.
উপরের ইংরিজি লাইনটা হলো বইয়ের উপ-শিরোনাম। প্রস্তর যুগ থেকে মানুষের দ্বারা উদ্ভাবিত এবং ব্যবহৃত বিভিন্ন information network (ভাষা, মিথোলজি, ব্যুরোক্রেসি, ধর্মগ্রন্থ, মুদ্রণযন্ত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, সংবাদমাধ্যম, রেডিও, ইন্টারনেট, ইত্যাদি) নিয়ে আলোচনা করেছেন বটে, তবে শেষ অবধি এই বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় যে “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স”, সেটা বোধহয় ইতিমধ্যে প্রায় সবাই জেনে ফেলেছেন। হারারি প্রথমে খুব ধীরেসুস্থে এবং বেশ বিশদে একদম প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে হাল আমলের তথ্য-সম্প্রচার ব্যবস্থাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সমাজের উপর, রাজনীতির উপর, অর্থনীতির উপর, ধর্মের উপর, সর্বোপরি ব্যক্তিমানুষের উপর ইনফরমেশনের প্রভাব নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছেন (বইয়ের প্রায় অর্ধেক আলোচনা এইসব বিষয়ে)। কারণ পুরো ইতিবৃত্তটা খোলসা না-হলে বর্তমান সমাজ এবং সভ্যতায় AI-এর প্রভাব আমার মতো বিজ্ঞানচর্চাহীন সাদামাটা পাঠকের মস্তিষ্কে সহজে ঢুকতো না। যদিও এই বইয়ের আলোচনা যতটা না প্রযুক্তি-বিষয়ক, তার চেয়ে বেশি আর্থসামাজিক। রাজনৈতিক।
হারারির প্রতিটা বইয়ের বিশেষত্ব হলো তিনি প্রচলিত চিন্তাভাবনাকে ভেঙেচুরে একটা নতুন রূপে পাঠকের সামনে হাজির করেন। এছাড়াও, হারারির প্রথম বই (“সেপিয়েন্স”) থেকেই আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, তিনি তীব্রগতিসম্পন্ন অনুভূতিহীন অত্যাধুনিক যন্ত্রসভ্যতাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দ্যাখেন। তাই বলে পাঠককে পুনরায় সেই আদিম শিকারী জীবনে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন, এমনটা নয়। তিনি শুধু এইটা বোঝাতে চান : আধুনিক সভ্যতার ব্যাপক অগ্রগতি নিয়ে নাচন-কোদন করার আগে একটু স্থির হয়ে বসে চিন্তা করো, বৎস। যতটা আহ্লাদে ডগমগ হচ্ছ, আদৌ কি ততটাও “মানুষ” হয়ে উঠেছে হোমো সেপিয়েন্স নামক প্রজাতিটা? নাকি বহু ক্ষেত্রে নিজের পায়ে কুড়ুল মারছি আমরা? এই বইতে এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের সাবধান করেছেন তিনি, যেটাকে ঠিক মতো ব্যবহার করতে না-পারলে, সম্ভবত এটাই হবে শেষবারের মতো পায়ে কুড়ুল মারা। এরপর কুড়ুলও থাকবে না, পা-ও না, পায়ের মালিকও না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে হারারি ২০১৬ সালে প্রকাশিত তাঁর Homo Deus বইটিতে কিছু প্রাথমিক আলোচনা করেছিলেন বটে, কিন্তু গত আট বছরে তথ্যপ্রযুক্তির এই ক্ষেত্রটি বহু দিগন্ত অতিক্রম করে ফেলেছে।
২০২২ সালে চ্যাট-জিপিটি বাজারে আসার পর থেকে, দোকানে-বাজারে-মাঠে-ঘাটে-পথে-প্রান্তরে-ফেসবুকে-টুইটারে-ব্লগে-ভ্লগে-সংবাদপত্রের কলামে অসংখ্য মানুষ বাঁকা চোখে চাপা হেসে প্রতিনিয়ত মন্তব্য করে চলেছেন : আরে বাওয়া... মানুষের বুদ্ধি, মানুষের চেতনা, মানুষের অনুভূতি, মানুষের... ইয়ে কী যেন বলে... মৌলিক সৃজনশীলতা, এইসব আয়ত্ত করা কি অতোই সস্তা রে ভায়া? এই তো আজকে সকালেই চ্যাট-জিপিটি ব্যাটাকে দুটো সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। এমন হাস্যকর উত্তর দিলো, হাসতে হাসতে কাশি পেয়ে গ্যালো। এই এলেবেলে জিনিসটা নাকি মানুষকে টেক্কা দেবে, হাহাঃ!
হারারির বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় : এই বাঁকা-হাসিওয়ালা (এবং আমার মতো যারা বাঁকা হাসে না, কিন্তু এই বিষয়ে অজ্ঞ) মানুষদের প্রকৃত বিপদটা সম্পর্কে অবহিত করা। “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স” প্রযুক্তিটি এখনও যে-পর্যায়ে রয়েছে, তাকে মানুষের জীবনচক্রের সঙ্গে তুলনা করলে বলতে হয়, এখনও সে হামাগুড়ি দিতেও শেখেনি। হাত পা ছুঁড়ে দোলনায় শুয়ে আঙুল চুষছে আর আবাবাবাবাবা গিগিগিগিগি এইসব দুর্বোধ্য কথা বলছে। কিন্তু এই দোলনা পর্যায়েই সে নিখুঁত ছন্দে কবিতা লিখছে (অসন্দিগ্ধ পাঠকের কাছে যেগুলোকে প্রতিষ্ঠিত কোনো কবির নামে সহজেই চালিয়ে দেওয়া যায়)। ওস্তাদের মতো ছবি আঁকছে (ধরিয়ে না দিলে অনেকসময় বোঝার উপায় থাকে না সেটা কোনো বিখ্যাত চিত্রকরের আঁকা নয়)। গানের সুর সৃষ্টি করছে (এটার ব্যাপারেও একই কথা)।
শেয়ার বাজার কিংবা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বিপুল পরিমাণ জটিল হিসাবপত্র চোখের নিমেষে হজম করে ফেলছে। সুযোগ পেলে গোটা-গোটা প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখে ফেলছে। অসংখ্য ধারা-উপধারা-দফা-অনুচ্ছেদ-কার্যবিধি-সংশোধনী সম্বলিত দেশের সংবিধানের খোলনলচে মুখস্ত করে ফেলছে (যেটা কোনো একক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়)। এত বেশি পরিমাণে ফেক-টুইট কিংবা ফেসবুকে ফেক-স্ট্যাটাস পোস্ট করছে যে, ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী সেইসব নকল পোস্টের সংখ্যা— দুনিয়ার সমস্ত পোস্টের শতকরা ৩০ ভাগ! মানে প্রতি তিনটে পোস্টের মধ্যে অন্তত একটা পোস্ট কোনো মানুষ লিখছে না, লিখছে একটা AI chatbot. এমনকি এই রিভিউটা আমি নিজে লিখেছি নাকি কোনো AI ওয়েবসাইট থেকে জেনারেট করা হয়েছে (পুরোটা না হলেও কিছুটা অংশ), এই ব্যাপারে পাঠকদের ১০০% নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই!