Persepolis 2: The Story of a Return
2000 • 194 pages

Ratings80

Average rating4.1

15

পোল্যান্ডের সাংবাদিক রিশার্দ কাপুশচিনস্কি'র লেখা [b:Shah of Shahs 244617 Shah of Shahs Ryszard Kapuściński https://i.gr-assets.com/images/S/compressed.photo.goodreads.com/books/1348782441l/244617.SY75.jpg 58070] বইটা পড়ে আমি ১৯৭৮/৭৯ সালে ইরানের ইসলামি গণবিপ্লবের ব্যাপারে প্রথমবার বিশদে জানতে পারি। রেজা শাহ পাহ্লাভি নামের একজন ভুয়া সম্রাটকে ইরানের মানুষ দেশ থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে সেই দেশে কায়েম হয়েছিল আয়াতুল্লাহ খোমেইনি নামের একজন গোঁড়া ধর্মগুরুর শাসনব্যবস্থা। ইরানে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল “ইসলামি প্রজাতন্ত্র” নামক একটি কাঁঠালের আমসত্ত্ব। রেজা শাহের আমলে হরেকরকম দুর্ভোগ ছিলো, সত্যি কথা। কিন্তু এই নবগঠিত ইসলামি আমসত্ত্বে ইরানের মানুষকে আধুনিক যুগ থেকে প্রায় মধ্যযুগে ট্রান্সপোর্ট করা হয়েছিল। ধর্মীয় শাসনের নামে নানারকম জোরজুলুমে বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলো (এখনও হচ্ছে) সেই দেশের সাধারণ মহিলাদের জীবন। কাপুশচিনস্কি তাঁর বইতে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়া পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন। “পার্সেপোলিস” নামের এই গ্রাফিক বইটি পড়ার পিছনে আমার উদ্দেশ্য ছিলো, ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে পারা।বইটির লেখিকা (এবং একইসঙ্গে অলংকরণ-শিল্পী) মারজান স্যাতরাপি তাঁর বইতে ইরানের সর্বস্তরের মহিলাদের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেননি। এটা এই বইয়ের সবচেয়ে প্রসংশনীয় দিক। পারিবারিকভাবে স্যাতরাপিরা ছিলেন ইরানের প্রকৃত রাজবংশের বংশধর (যে-রাজবংশের রাজাকে উৎখাত করে রেজা শাহ পাহ্লাভির বাবা নিজেকে নতুন রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন)। লেখিকার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনস্ক এবং মুক্তচেতনার মানুষ। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দমবন্ধ করা পরিবেশেও তাঁরা নিজেদের একমাত্র মেয়েকে যতটা সম্ভব স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বইটির ভূমিকায় লেখিকা লিখেছেন, ইরানের প্রাচীন এবং মহান সভ্যতার ব্যাপারে আজকাল কেউ আলোচনা করে না। ইরানের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার মুখে শুধু ইসলামি মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা এবং সন্ত্রাসবাদের কথা উঠে আসে। ইরানের ব্যাপারে মানুষের এই ত্রুটিপূর্ণ ধারণাগুলোকে সংশোধন করাই হচ্ছে এই বইটা লেখার সবচেয়ে বড়ো প্রেরণা। পুরো বইটা পড়ার পরে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আধুনিক ইরানের দেশজ সংস্কৃতি কিংবা ঐতিহ্যের ব্যাপারে এই বইটা থেকে আমি কিচ্ছু জানতে পারিনি। ইরানের একটি উচ্চমধ্যবিত্ত এবং সুরক্ষিত পরিবারের একমাত্র আদরের সন্তানের নিছক ব্যক্তিগত আত্মকথা এটা। একটা মাঝারি মানের “কামিং অফ এইজ” গোত্রের কাহিনি। এর চেয়ে খুব বেশি কিছু নয়।বইটির বিষয়গত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যদি ইরানের গোঁড়া ইসলামি পরিবেশ এবং যুদ্ধবিগ্রহকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে কী পড়ে থাকে? পড়ে থাকে সচ্ছল পরিবারের একটি অল্পবয়েসি মেয়ের কথা, যার জীবনের সবচেয়ে বড় “স্ট্রাগল” ছিলো এটাই যে, বাড়ির বাইরে বেরোলে তাকে মাথায় কাপড় ঢেকে বেরোতে হবে। বইটির ভূমিকাতে তিনি ইরানের সংস্কৃতির ব্যাপারে পাঠককে অবহিত করবেন এমনটা দাবি করলেও, গোটা বই জুড়ে তিনি শুনে গেলেন কিম ওয়াইল্ডের পপ এবং আয়রন মেইডেনের হেভি মেটাল সংগীত। নিজের মাতৃভাষার থেকেও ফরাসি ভাষার চর্চা করেছেন বেশি। দেশের এই শোচনীয় অবস্থাতেও তাঁর বাবা মূল্যবান ক্যাডিল্যাক গাড়ি চালাচ্ছেন, লেখিকা নিজেই স্বীকার করেছেন, এই কথা চিন্তা করে তাঁর লজ্জা লাগতো। গোটা বইতে আমি ইরানের একজনও সাধারণ আমজনতার দেখা পাইনি। কিংবা তাদের গলার আওয়াজ শুনিনি। ইসলামি গণআন্দোলনের সময়, লেখিকা দেখিয়েছেন, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মূল বিরোধিতার কাজটি করেছিলেন সেই দেশের শিক্ষিত পরিশীলিত কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন মানুষরা। বিক্ষোভ-বিপ্লব করেছেন মূলত তারাই, জেলে বন্দী হয়েছেন তারাই, অত্যাচারিত হয়েছেন তারাই। কথাটা কি সত্যি? না তো! এটা তো সত্যি কথা নয়। কাপুশচিনস্কি'র বইটা পড়লে খুব ভালোভাবেই জানতে পারা যায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন সেই দেশের আমজনতা। সাধারণ খেটেখাওয়া ধর্মভীরু মানুষরা। অশিক্ষিত অভুক্ত মানুষরা। রাজতন্ত্র থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ইরানের সাধারণ মানুষ নিজেদের ইচ্ছায় দেশে ধর্মতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজতন্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত করে একজন ধর্মগুরুর হাতে নাকি দেশের শাসনব্যবস্থা অর্পণ করেছেন কমিউনিস্টরা। শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো?এই ধর্মতন্ত্রের নিপীড়ন থেকে নিজেদের মেয়েকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে লেখিকাকে ইয়োরোপে (অস্ট্রিয়াতে) পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা, পড়াশুনা করার জন্যে। সেই ইয়োরোপ-অধ্যায়ে লেখিকা যে-জীবনটি যাপন করেছেন, তাকেও কি কেউ “স্ট্রাগল” বলবেন? বাপ-মায়ের টাকায় তিনি উদ্দাম পার্টি করেছেন, নেশাভাং করেছেন, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ব্রেকআপ হওয়ার পরে তিনমাস ধরে (হ্যাঁ, তিনমাস) মনের দুঃখে রাস্তায় রাস্তায় (আক্ষরিক ভাবেই রাস্তায় রাস্তায়, পার্কের বেঞ্চে, ট্রামের কামরায়) ঘুরে বেড়িয়েছেন। এবং একটা সময়ে, সমস্ত টাকাপয়সা ফুঁকে দেওয়ার পরে, শরীরের অবস্থাও যখন বেহাল, তখন ঘরের মেয়ে আবার ঘরে ফিরে গেছেন। হ্যাঁ, নিজের জীবনের এই অপদার্থতার কথাগুলো খুব সততার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন লেখিকা। বইটির কিছু মূল্য যদি থেকে থাকে, তাহলে এটাই। কিন্তু, এটা ছাড়া লেখিকার আর কী-বা করার ছিলো? ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ে ইরানের সাধারণ মানুষ যখন অকল্পনীয় কষ্টের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন, লেখিকা তখন ইয়োরোপের শপিংমলে শপিং করতে করতে হাঁফিয়ে যাচ্ছেন। সেই যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিল, সেইসব মানুষদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে দেখে তিনি বিরক্ত হচ্ছেন। বিদেশে থাকার সময়, যুদ্ধে বিধ্বস্ত স্বদেশের কোনো খবর তিনি রাখেননি। দেশে ফিরে আসার পরে বাবার কাছ থেকে “পোস্ট-ম্যাচ হাইলাইট” শুনেছেন। সুতরাং বইয়ের বিষয়বস্তু হিসেবে যদিও তিনি দাবি করেছেন, তিনি নাকি আমাদের ইরানের কথা শোনাবেন, তার বদলে নিজের এই “স্ট্রাগল পরিপূর্ণ” জীবনের সৎ উপাদান ছাড়া সত্যিই তো লেখিকার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে আর কিছু ছিলো না!কিন্তু সচ্ছল পরিবারের বখে যাওয়া একটি মেয়ের এই “এগজিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস” (আসলে দায়দায়িত্বহীন অপকর্ম)-এর কাহিনি জানার জন্যে এই বইটা পড়ার কথা ভাবিনি আমি। মেয়েদের এর চেয়েও নিদারুণ দুরবস্থা এবং “সত্যিকারের স্ট্রাগল”-এর দগদগে চিহ্ন ইরানের পথেঘাটে পাড়ায়-মহল্লায় ছড়িয়ে আছে। এই মেয়েরা নিজেদের মানসিক ডিপ্রেশন থেকে একটু হালকা হওয়ার জন্যে শৌখিন স্কি-ভ্যাকেশনে যাওয়ার সুযোগ পায়না। ধর্মীয় অত্যাচার থেকে বাঁচতে বিদেশে পালানোর সুযোগের কথা তো এরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা। মস্ত বড়ো আইরনির কথা হলো, এই বইতে লেখিকা নিজেকে একজন “তৃতীয় বিশ্বের মেয়ে” হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাপের টাকায় অস্ট্রিয়ার নিষিদ্ধ ক্যাফেতে বসে ফরাসি প্রেমিকের সঙ্গে গাঁজা টানতে টানতে...যে-জিনিসগুলো বইটার থেকে আশা করেছিলাম, এবং লেখিকা নিজেও যে-বিষয়গুলো আমাকে জানাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন, দুটোই অপূর্ণ রয়ে গেছে। বইটির অলংকরণ খুবই উচ্চমানের এবং বুদ্ধিদীপ্ত। রেটিংয়ের তিনটে তারার মধ্যে দুটো তারা অলংকরণের কারণেই দিয়েছি। বইয়ের পিছনের মলাটে Sunday Telegraph পত্রিকা সার্টিফিকেট দিয়েছে : “Persepolis is a stylish, clever and moving weapon of mass destruction.” এই সার্টিফিকেটে শুধু “stylish” শব্দটা সত্যি। বাদবাকিটা আসলে বিপদের মুখোমুখি হওয়ার নাম করে বারবার বিপদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার একটা ছাপোষা গল্প। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, সমসাময়িক যেকোনো “সাধারণ” পরিবারের একজন ইরানি মেয়ে, মারজান স্যাতরাপির এই “ট্র্যাজিক” (এই শব্দটাও বইয়ের মলাটে ব্যবহার করা হয়েছে) জীবনকাহিনি শুনে কী মন্তব্য করবেন!“Freedom makes a huge requirement of every human being. With freedom comes responsibility. For the person who is unwilling to grow up, the person who does not want to carry his own weight, this is a frightening prospect.” (Eleanor Roosevelt)

March 22, 2023Report this review