Ratings1
Average rating4
Reviews with the most likes.
বিলের ভিত্রে ভাট্টি মানে হিলের উপ্রে মিল কইরা ঝিলপাড়ের জঙ্গলে মর্ডান কবি লেখে, আর ছাইড়া দিলে যেমনে পুরা দেশবাসী দ্যাখে, জ-জ-জয় ভান্ডারী চিটাগাইংগা ব্যাকে, ধুঁয়ার চোটে কানা যেমনে নারিকেলের ধূপ মাইরা সেট!!!
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি জানি, পাগল ছাড়া দুনিয়া চলেনা। কিন্তু ৪০৩ পৃষ্ঠার এই রহস্য উপন্যাস পড়ে ধুঁয়ার চোটে কানা যেমনে নারিকেলের ধূপ মাইরা সেট হয়ে থাকে, আমিও ঠিক তেমনি সেট হয়ে চেয়ারে বসে আছি আপাতত।
বেশ আশা জাগিয়ে শুরু হয়েছিল গল্পটা। আমার খুব প্রিয় একজন কবি প্রসূন বন্দোপাধ্যায়ের কবিতার চমৎকার একটা পঙ্ক্তি দিয়ে গল্পের সূচনা করেছেন লেখক। প্রতিটা অধ্যায়ের শুরুতেই সত্তরের দশকের বিভিন্ন কবিদের কবিতার পঙ্ক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। গোটা উপন্যাসটা পড়লে খুব স্পষ্ট বুঝতে পারা যায় যে, লেখক একজন মরমিয়া কবিতাপ্রেমী। রহস্যগল্পের মধ্যে কবিতার অনুষঙ্গ। বাহ, কী দারুণ ব্যাপার!
বিদেশি রহস্য-সাহিত্যে বহুবার দেখেছি কাহিনির ভেতরে আরেকটা কাহিনি, উপন্যাসের ভেতরে আরেকটা কাল্পনিক উপন্যাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে (“embedded narrative”)। বাংলা সাহিত্যে এমন বস্তু এখনও আমার চোখে পড়েনি। এই উপন্যাসে সেই অভিনব শৈলীটিকে, সম্ভবত প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছে। বাহ, আরো দারুণ ব্যাপার!
গল্প এগোতে থাকে। দেখতে পেলাম, পাঠকের সস্তা মনোরঞ্জনের জন্যে রহস্যকাহিনির চিরাচরিত “escapist” ফর্মুলাগুলোর বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যুকে টেনে আনা হয়েছে। সত্তরের দশককে বলা হয় “মুক্তির দশক”। শুধু তো মুক্তির দশক নয়, তোলপাড় করা ঘটনার দশকও বটে। নকশালবাড়ি আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলন, ভারতীয় গণতন্ত্রে “ইমার্জেন্সি”র অনুপ্রবেশ, আরো কতো কিছু। এইসব সমকালীনতাকে কাহিনির ভাঁজে ভাঁজে গুঁজে দিয়েছেন লেখক। বাহ, আনন্দে আমার প্রাণ আত্মহারা!
কিন্তু শ'খানেক পৃষ্ঠা এগোতেই মনটা খচখচ করতে লাগলো। একটু বেশি বকরবকর করছেন না লেখক? একই কথার, একই ঘটনার, একই জটিলতার বারবার পুনরাবৃত্তি করছেন না? গল্পের গতিও অত্যন্ত মন্থর। ছোটোবেলায় শীতকালের ভোরবেলায় টিউশানিতে যাওয়ার জন্যে যখন জোর করে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া হতো, তখন যেভাবে চোখ অর্ধেক বন্ধ করে ভ্যাবলার মতো দাঁত মাজতাম, সেইরকম মন্থর। ভাবলাম, কী জানি বাবা, এটা তো আর-পাঁচটা বাজারি রহস্য উপন্যাসের মতো ফালতু জিনিস নয়। এর মধ্যে পোস্টমডার্ন কবিতা, নকশাল আন্দোলন, লিটিল ম্যাগাজিন, এই সব বড়ো বড়ো সব ব্যাপার আছে, হুঁ হুঁ বাওয়া।
মাঝের দুশো পৃষ্ঠায় পৃথিবীর সর্বকালের জটিলতম জিলিপির প্যাঁচ তৈরি করেছেন লেখক। খুব ভালো কথা। জিলিপির প্যাঁচেও আমার কোনও আপত্তি নেই (আই ♥️ আগাথা ক্রিস্টি)। আমি তো রেডি হচ্ছি রহস্যের দুর্দান্ত উন্মোচনের জন্যে। ওহ হরিবোল, কোতায় গ্যালো তোমার নকশাল, কোতায় গ্যালো তোমার লিটিল ম্যাগাজিন, আর কোতায়ই বা গ্যালো মুহুর্মুহু কবিতার ব্যবহার। রহস্য উন্মোচনের বাহানায় একটা গোদা সাইজের রামধনু রঙের গরুকে ঠেলে ঠেলে গাছে তুলে দিয়েছেন লেখক। শেষমেশ যদি সেই গাঁজার চাষই করবে, তাহলে অ্যাতো সোশিও-কালচারাল কেরামতির কী দরকার ছিলো মশাই?
যিনি গোয়েন্দা, তিনি রহস্যের সমাধান কীভাবে করেছেন? উপন্যাসের একদম শেষের দিকে, যিনি অপরাধী, তিনি হতবুদ্ধি হয়ে গোয়েন্দাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন :
“আপনার এই সমস্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তি কোথায়?”
গোয়েন্দাকে তো আর পাচ্ছি না, তাই লেখকের প্রতি আমারও একই প্রশ্ন। এই জটিল রহস্যের যেরকম হাস্যকর (এবং অবিশ্বাস্য) সমাধানটা আপনি পেশ করলেন, তার ভিত্তি কোথায়? নেই! কোনও ভিত্তি নেই! যেন স্বপ্নের ভিতরে রাতারাতি সমাধান খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দা। শুধু খুঁজে পাননি, সিনেমার মতো চোখের সামনে পুরো ঘটনাটা পষ্ট দেখতে পেয়েছেন।
স্রেফ আন্দাজে! স্রেফ “ইনটুইশন” নামক ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করে! বেশি কিছু বলতে পারছি না স্পয়লার দিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায়, কিন্তু একটা যৎসামান্য ক্লুয়ের দড়ির উপর দাঁড়িয়ে যে অসামান্য মাদারির খেলা দেখিয়েছেন, স্বয়ং শার্লক হোমস থাকলে গোয়েন্দাকে বলতেন, “মা গো, মা জননী, আপনার এট্টুসখানি পায়ের ধুলো আমার মাথায় মাখিয়ে দিন, প্লিজ? ব্রো ওয়াটসন, ওরকম ফ্যালফ্যাল কোরে তাকিয়ে কী দেকচো? তুমিও মা জননীকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করো! হ্যাঁ, শুয়ে পড়ো। একদম টানটান হয়ে মাটিতে শুয়ে প্রণাম করো!”