Ratings4
Average rating4
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই গোটা রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপ জুড়ে চালু হয়েছিল রাষ্ট্রের দ্বারা সার্বিক পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা। দেশের জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনকে যেমন কড়া পাহারায় রাখা হয়েছিল, বাইরের দুনিয়ার থেকেও নিজেদের আড়াল করে রেখেছিল রাশিয়া এবং রাশিয়াসংলগ্ন দেশগুলো। মূলত মহামানব জোসেফ স্ট্যালিনের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল ঘোমটার তলায় এই খ্যামটা নৃত্য। আরেকজন মহামানব উইনস্টন চার্চিল (জোসেফের পুরাতন বন্ধু) রাশিয়ার এই ঢাক ঢাক গুড় গুড় স্বভাবের নামকরণ করেছিলেন : “আয়রন কার্টেন”, অর্থাৎ লোহার তৈরি যবনিকা। রতনে রতন চেনে, শুয়োরে চেনে কচু।
এই বিশাল অঞ্চলের মানুষ এবং সমাজব্যবস্থার ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষ প্রায় কিছুই জানতে পারছিল না। সত্যি কথার পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছিল হরেক রকম গুজব। বইয়ের শুরুতেই জন স্টাইনবেক শপথ করে নিয়েছিলেন, তিনি সোভিয়েত দেশে যেতে চান প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে। তিনি লিখেছেন, নিজের চোখে যা দেখবো তাই লিখবো। কিন্তু কথা দিয়ে তিনি কথা রাখতে পারেননি। শুরুর দিকে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বই যত এগিয়েছে ধীরে ধীরে খসে পড়েছে বিনয়ের মুখোশ। সূক্ষ্ম তাচ্ছিল্যের সুর ঢুকে পড়েছে বর্ণনায়। সরাসরি প্রকাশ করা দম্ভের চেয়ে ছদ্ম-বিনয় বেশি অস্বস্তিকর। “সকল দেশের রানি সে যে মোদের আমেরিকা” গানটির প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেননি জন স্টাইনবেকের মতো মানবতাবাদী সাহিত্যিকও!
অনেক কিছু জানতে পেরেছি যদিও। মস্কো-লেলিনগ্রাদ কেন্দ্রিক প্রচলিত ভ্রমণরীতির বাইরে বেরিয়ে তিনি ঘুরতে গেছেন ইউক্রেন এবং জর্জিয়াতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই এইসব দেশের পরিস্থিতির বিবরণ কোনো বইতে পাইনি আগে। স্টাইনবেকের বর্ণনার চেয়েও আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে বইয়ের পৃষ্ঠায় মুদ্রিত বিখ্যাত ফটোগ্রাফার রবার্ট কাপা-র তোলা অজস্র সাদাকালো ছবি। প্রসঙ্গত, রাশিয়া ভ্রমণে স্টাইনবেকের সঙ্গী ছিলেন স্বয়ং কাপা।
শব্দের চেয়ে ছবির শক্তি বেশি— এই কথাটায়, পুরোপুরি না হলেও, কিছুটা সত্যতা আছে! স্টাইনবেকের খোঁচা-দেওয়া গদ্যের চেয়ে কাপা-র ছবি দেখে রাশিয়াকে বেশি ভালো চিনতে পেরেছি আমি। বইটি লেখা হয়েছে ১৯৪৭ সালে। রাশিয়ার মানুষের সর্বনাশের সাতকাহন তখন সবে শুরু হয়েছে, যা শেষ হতে বাকি আরো পাঁচ দশক! এবং ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হতে হতে, দেশের জনগণের উপর রাশিয়ার এই নজরদারির স্বভাব আয়ত্ব করে ফেলবে আমেরিকা নিজেও— নজরদারিকে নিয়ে যাবে শিল্পের উচ্চতায়!
(জর্জিয়ার চা বাগান, আলোকচিত্রী - রবার্ট কাপা)