Ratings49
Average rating3.8
এক সিরিয়াল কিলার আর তার লগে টম অ্যান্ড জেরি খেলা নায়িকার গল্প ইন্টেন্সিটি। নায়িকার নাম চায়না, ব্যাপারটা এমন না যে তার লগে চায়না দেশের কোন সম্পর্ক আছে। বাপ-মা তারে ছোটবেলার থিকা চায় না, তাই নাম হয়া গেছে চায়না। গল্পের ধাপে ধাপে চায়না'র নামকরণের সার্থকতা পাওন যায়, মানে, এইরকম মাথামোটা, বেকুব মাইয়া আপ্নের হোউক আপ্নেও কখনো চাইবেন না। গল্পের কাহিনী হইলো এইরকমঃ কুফা মাইয়া চায়না তার জিগরী বান্দুবি লরার বাড়ীতে উইকেন্ড কাটাইতে যায়। সেই রাইতেই, লরার গোটা ফ্যামিলি শত শত মাইল দূর থিকা আসা এক সিরিয়াল কিলারের হাতে খুন হয়া যায়। চোউক্ষের সামনে বান্দুবিরে মরতে দেইখা চায়নার বুকে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ কইরা জ্বইলা উঠে, সে তাই কিলারের অজান্তে টুপ কইরা তার মোটর হোমের ভিতরে লুকায়া উইঠা পড়ে। কেন্দ্রীয় চরিত্রের যেইখানে সুবিধা হয়, আর ভিলেন চরিত্রের যেইখানে অসুবিধা হয়, সেই সেই জায়গাগুলাতে কাকতালীয় সব ঘটনা ঘটায়া লেখক দুষ্টরে দোজখের আগুনে পুড়ায়া দিছেন আর শিষ্টরে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করছেন। হিন্দী সিরিয়ালের মতোন নাটকে ভরা এই বই আপনেরে বিভিন্ন টাইমে জানান দিয়া দিবো বইয়ের নামের বানান “Intensity” হইলেও উচ্চারণটা হইবো “চায় না”, কারণ বইয়ের পাত্রমিত্ররা তাগোর যা করনের কথা তার কিছুই করবার চায় না। যেমুনঃ
১। কিলার ভদ্রলোক চায় না তার মোটর হোমটারে একটু পরিষ্কার কইরা রাখতে, তার গাড়ীতে তার আগের দুই চাইরটা খুনের বডি এবং আলামত রাইখা সে এক স্টেট থিকা আরেক স্টেট দাবড়ায়া বেড়ায়।
২। চায়না চায় না কিলারের মোটর হোমটারে ভালো কইরা দেইখা সেইটার রঙ, হুলিয়া, কোন কম্পানির তৈরী এইসব মুখস্ত কইরা পুলিশের কাছে সেই বিবরণী দিতে।
৩। কিলার ভদ্রলোক সাধারণ খাবার খাইতে চায় না, তাই সে দেয়াল থিকা খাবলা মাইরা মাকড়সা ধইরা কচকচ কইরা খায়া ফ্যালায়।
৪। অনেক নাটক কইরা একখান রিভলবার এস্তেমাল করতে পারলেও চায়না চায় না রিভলবারে আদৌ গুল্লি আছে কিনা সেইটা পরীক্ষা কইরা দেখতে, যদিও এই কাজের জন্য ১৪ ঘন্টা সময় সে পাইছিলো। ফলাফল, কিলারের হাতে ধরা পড়া। তবে চিন্তার কিছু নাই, কিলার চায় না চায়না মইরা যাক। লেখকও চায় না চায়নার গুল্লিতে কিলার মইরা যাক।
৫। মোটর হোমের ভিতরে চায়নার অস্তিত্ব টের পাইলেও কিলার চায় না চায়নারে মারতে।
৬। কিলার তার বাড়ীতে চায়নারে শিকল দিয়া বাইন্ধা রাখলেও সে চায় না চায়না বন্দী থাকুক, তাই তারে কামে যাওনের আগে কয়া যায় কখন ফিরত আইবো, যাতে সেই টাইমে (৬ ঘন্টা) চায়না তার সুবিধামতো যন্ত্রপাতি টোকায়া নিজেরে মুক্ত কইরা নিতে পারে।
৭। কিলারের বাড়ীতে চায়নার লগে আরেকটা যেই বাচ্চা মাইয়া বন্দী থাকে, সেও চায় না কিলারের হাত থিকা মুক্তি পাইতে। তারে বুঝানোর লিগা চায়না দেড় ঘন্টা ধইরা তার ছোডবেলার কাহিনী শুনায়। এইসব নাটকে আরো পরিষ্কার হয়া উঠে, কেন তারে চাওনা যায় না।
... এইরকম আরো অনেক “চায় না” আছে, সব “চায় না”র লিষ্টি করতে আমার মনও আর সাড়া দিতে চায় না।
ইন্টেন্সিটি মূলত একটা ধান্দাবাজি বই, লেখক এইখানে যেইটা দেখাইছেন তা হইলো ধর্মহীন, নাস্তিক পাশবিক চরিত্রের এক খুনি বনাম ঈশ্বরপ্রেমী বাইবেলপড়ুয়া চায়নার ফাইট। ধর্মের পতাকা উচ্চে ধরা যাগো জীবনের মূল এজেন্ডা, তাগোর একটা কমন প্যাটার্ন আছে। ঐতিহাসিকভাবেই, ধর্মবিশ্বাস আর চিন্তার গভীরতার সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক। এই প্রসঙ্গে ছোটবেলায় শোনা একটা দুষ্ট গল্প বলা যাক। তো ম্যাডামের বাসায় অনেক রাত অব্দি ছাত্র পড়ালেখা করার পর হুঁশ হইছে দুইজনেরই যে এত রাত হয়া গেছে। ম্যাডাম তখন বলছে আজকা রাতটা তুমি আমার লগেই থাইকা যাও। সকালে উইঠা ম্যাডাম ছাত্ররে জিগাইছে, তুমি রাইতে আমার নাভিতে আঙুল দিতেছিলা ক্যান? ছাত্র কইলো এইটাই আমার অভ্যাস। বাইদিওয়ে, আপ্নে যেটারে আঙুল বলতেছেন, ঐটা আমার আঙুল না আসলে। ম্যাডাম বলছে, তুমিও যেটারে আমারে নাভি মনে করছ সেইটা আমার নাভি না! কম বয়সে হরমোনের জোয়ারে স্কুল পড়ুয়া পোলাপাইন এইসব যুক্তিহীন আজেবাজে গল্প বন্দু বান্দবরে কয়া মজা পায়-তাগো দোষ নাই এইখানে। কিন্তু কুন্টজ সাহেব যেটা করছেন সেটা জাস্ট নির্জলা ফাতরামি। বাইবেলের উপর কঠিন বিশ্বাস রাখা চায়না যে কত ভালো, তার বর্ণনা দিতে গিয়া চিন্তার গভীরতার অভাবে ভোগা ডিন কুন্টজের ‘আঙুল' ম্যালাবারই ‘নাভি'তে চইলা গেছে অনর্থক।
গোটা বইয়ে একমাত্র যেই বিষয়ে লেখক মাথা খাটাইছেন সেইটা হইলো খুনির নাম নির্বাচন। আমাগো সিরিয়াল কিলার ভদ্রলোকের নাম Edgler Foreman Vess। এই নামের অক্ষরগুলান দিয়া ‘semen', ‘rage', ‘fear' ইত্যাদি শব্দগুলান হয়, আর হয় একখান বাক্য, ‘God fears me'। এইসব আবোল তাবোল কথা বানানির লিগা লেখক ডিন কুন্টজ এইরকম অদ্ভুত একটা নাম বানাইছেন। ব্যক্তিগত জীবনে কুন্টজ সাহেব ধর্মের ব্যবসা করা রিপাব্লিকান পার্টিরে সমর্থন করেন, যেটারে বাঙলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দলগুলার সমান্তরাল কওন যায় (হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী শাসনতন্ত্র... ইত্যাদি)। চাইলে রিপাব্লিকান পার্টিরে বিএনপির লগেও তুলনা দেওন যায়, তবে সেইক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে, তাইলে আওয়ামী লীগের লগেও তুলনা টানন যায় না ক্যান? ধর্ম যেহেতু দুইটা দলেরই রাজনীতির মূল হাতিয়ার, এবং দল দুইটার নাম আর কর্তাব্যক্তিদের নাম ছাড়া আর সব কিছুতেই যেহেতু তারা সেম সেম এক কালার। একটা দল গাধার খোলস পইরা থাকা শুয়োর, আরেকটা খোলাখুলি শুয়োর, এইতো পার্থক্য। যাউক, মূল কথা হইলো এইরকম ধর্মীয় এজেন্ডা নিয়া যেইসব লেখকেরা লিখতে বসেন, এবং নিজ নিজ ধর্মের গুণগান গল্পের চিপায় চাপায় গায়া দেন, তাঁগো কল্পনাশক্তি আর জানাশুনার দৌড় বরাবরই খুব সীমাবদ্ধ। ঈশ্বরবিশ্বাসের যেই চশমাডা পিন্দা থাকেন তাঁরা, সেইটার কাঁচটা খুব ঘোলা, ধর্মের চৌহদ্দীর কয়েক ফুটের বাইরে আর তাঁরা নজর ফেলবার পারেন না। ডিন কুন্টজ বাঙলা জানলে সম্ভবত উনি কাশেম বিন আবুবাকার হইতেন, কিংবা কাশেম সাহেব ইংরাজী জানলে......