Ratings12
Average rating4.3
দক্ষিণ ভারতের একটি ছোটো মফস্বল শহরের নাম মালগুড়ি। ভারতের মানচিত্রে যদিও “মালগুড়ি” নামের কোনো শহরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত নাম এটি। তাই বলে কি শহরটা মিথ্যা? একেবারেই নয়! এই গল্পসংকলনটি পড়লেই বোঝা যায়, নামটি নিছক কাল্পনিক হলেও, শহরটি মোটেও কাল্পনিক নয়, শহরের মানুষজন কাল্পনিক নয়, এই সংকলনের ৩২টি গল্পে বর্ণিত ঘটনাগুলোও কাল্পনিক নয়।
বস্তুত, ভারতবর্ষের হাজার হাজার অজ্ঞাত অখ্যাত মফস্বল শহরের প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মালগুড়ি নামের এই অস্তিত্বহীন শহরটি। বইয়ের ভূমিকায় লেখক নিজেই বলেছেন : If I explain that Malgudi is a small town in South India I shall only be expressing a half-truth, for the characteristics of Malgudi seem to me universal. আধুনিক বিশ্বসাহিত্যের দরবারে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এবং স্বীকৃতি পাওয়া একডজন ভারতীয় (ফিকশন) বইয়ের তালিকায় এই বইটি স্থান করে নেবে, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
আর. কে. নারায়ণের লেখা আগেও পড়েছি আমি। বেশ কিছুকাল আগে যদিও। কিন্তু তাঁর সরস এবং অনায়াস গল্প বলার ভঙ্গিটি ভুলে যাইনি। ভুলে যাইনি তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণক্ষমতা। গল্প বলার এই ছিমছাম নিরিবিলি ধরণটি আমার ভীষণ পছন্দ। কোনো চালাকি কিংবা বাহাদুরি নেই, গদ্যভাষা নিয়ে অহেতুক এক্সপেরিমেন্ট নেই, প্লটের মারপ্যাঁচে পাঠককে চমকে দেওয়ার চেষ্টা নেই, শেষ অনুচ্ছেদে ও-হেনরি মার্কা টুইস্ট নেই। প্রতিটা গল্প ধরে ধরে বিচার করলে সবকটি গল্পের মান সমান নয়। যে-কোনো সংকলনের ক্ষেত্রেই যেমনটা হয়ে থাকে আরকি।
কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। সবকটি গল্পের একত্র সমাহারে “মালগুড়ি ডেইজ” যেন একটি অভিন্ন অভিনব নন্-লিনিয়ার উপন্যাসের রূপ ধারণ করেছে। গল্পগুলোর চরিত্ররা, তাদের নানারঙের সুখ দুঃখ সমস্যা সংশয় আশা আকাঙ্ক্ষা, তাদের জীবনের বৈচিত্র্যময় একঘেঁয়েমি — সবমিলিয়ে, মালগুড়ির বিষয়বস্তু ও প্রাসঙ্গিকতা আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত নয়। অপরিচিত নয় বলেই এর আবেদনও চিরন্তন। এবং সর্বজনীন। Universal !
বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে মালগুড়ি শহরের পাশে প্রবহমান সরায়ু নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে (নদীর নামটিও কাল্পনিক!)। জীবন অনেক আধুনিক হয়েছে, জটিল হয়েছে, জীবনের গতিবেগ বেড়ে গেছে। কিন্তু মানুষ এখনও “মানুষ” রয়ে গেছে। ভারতবর্ষ কেমন দেশ? কেমন এই দেশের জনসাধারণ? কেমন তাদের চিন্তাভাবনা? তাদের জীবনযাপন? — ভবিষ্যতে এইসব প্রশ্ন যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তার হাতে “মালগুড়ি ডেইজ” তুলে দেবো।