Ratings3
Average rating4.3
Where is 'home'? For Amartya Sen home has been many places - Dhaka in modern Bangladesh where he grew up, the village of Santiniketan where he was raised by his grandparents as much as by his parents, Calcutta where he first studied economics and was active in student movements, and Trinity College, Cambridge, to which he came aged nineteen. Sen brilliantly recreates the atmosphere in each of these. Central to his formation was the intellectually liberating school in Santiniketan founded by Rabindranath Tagore (who gave him his name Amartya) and enticing conversations in the famous Coffee House on College Street in Calcutta. As an undergraduate at Cambridge, he engaged with many of the leading figures of the day. This is a book of ideas - especially Marx, Keynes and Arrow - as much as of people and places. In one memorable chapter, Sen evokes 'the rivers of Bengal' along which he travelled with his parents between Dhaka and their ancestral villages. The historic culture of Bengal is wonderfully explored, as is the political inflaming of Hindu-Muslim hostility and the resistance to it. In 1943, Sen witnessed the Bengal famine and its disastrous development. Some of Sen's family were imprisoned for their opposition to British rule- not surprisingly, the relationship between Britain and India is another main theme of the book. Forty-five years after he first arrived at 'the Gates of Trinity', one of Britain's greatest intellectual foundations, Sen became its Master.
Reviews with the most likes.
I bought this book cos I was curious about the author's “Capability approach” to welfare economics. And it wasn't mentioned once :-).
The book itself maybe a 3.5 but the author's life is a 4 or 5. Feel quite jealous of the intellectual company Sen participated in.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন পুরোদমে চলছে। প্রায় গোটা পৃথিবী মেতে আছে অভূতপূর্ব ধ্বংসলীলায়। অমর্ত্য সেন সেই সময় মাত্র বছর-দশেকের একজন বালক। পুরোনো ঢাকায় নিজের পৈতৃক বাড়ি এবং ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সেইন্ট গ্রিগোরি স্কুল ত্যাগ করে (মূলত যুদ্ধের কারণেই) শান্তিনিকেতনের স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছেন। বসবাস করছিলেন তাঁর দাদু-দিদিমার সঙ্গে (দাদু ছিলেন প্রবাদপ্রতিম পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সরাসরি কোনো প্রভাব তখনও শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছায়নি।
১৯৪৩ সালের বসন্তকালে, বছরের যে-সময়টাতে সাধারণত শান্তিনিকেতনে উৎসবের মরশুম চলে, হঠাৎ একদিন সেখানে একজন পাগলের উদয় হলো। অপ্রকৃতিস্থ উন্মাদ একজন মানুষ। ছেলেছোকরাদের যেমন কাজ, তারা সেই পাগলকে উত্যক্ত করতে শুরু করলো। খোঁজখবর নিয়ে জানা গ্যালো, মানুষটা আদপে পাগল নন। একমাসেরও বেশি সময় তিনি অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন আহারের অভাবে সাময়িক মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটেছে তাঁর। ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সঙ্গে এভাবেই প্রথম প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটেছিলো অমর্ত্য সেনের।
এই একটি ঘটনা অমর্ত্যের ভবিষ্যত জীবন এবং চিন্তাভাবনার মূল লক্ষ্যটি নির্ধারণ করে দিয়েছিলো। অমর্ত্য সেনের এই আত্মজীবনী আর-পাঁচটা আত্মজীবনীর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। অনেক পাঠক হয়তো একে আত্মজীবনী বলেই মানতে চাইবেন না (কিংবা পড়ার পরে হতাশ হবেন)। এই বইতে, পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের “গোপন” বৃত্তান্ত, অথবা স্বীকারোক্তিমূলক সাহসী আত্মউন্মোচন করার কাজ থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। নিজের পরম ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যক্তিগতই রেখেছেন। কোনও চমকপ্রদ এবং উত্তেজক তথ্যই যদি না-পাওয়া গ্যালো তাহলে এই আত্মজীবনী পাঠ করে আমাদের লাভ কী?
১৭৭৬ সালে অ্যাডাম স্মিথের লেখা সুবিখ্যাত “Wealth of Nations” বইটি প্রকাশের মধ্যে দিয়ে, তাত্ত্বিকভাবে “ক্লাসিকাল অর্থনীতি”র ভিত্তি স্থাপন করা হয়। আবহমানকাল ধরে চলে আসতে থাকা রাজতান্ত্রিক এবং জমিদারতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেয়ে ইয়োরোপের মানুষ তখন বাজারতান্ত্রিক পুঁজিবাদী অর্থনীতি বা market capitalism-কে সাদরে বরণ করে নিয়েছিল।
এই নতুন ধরণের অর্থনীতির প্রাণভোমরা ছিলো “পুঁজি”, অর্থাৎ ক্যাপিটাল। এই অর্থনীতির উদ্দেশ্য ছিলো বাজারের চাহিদা (demand) এবং যোগান (supply)— এই দুই অবস্থার মধ্যে সহাবস্থান বজায় রাখা। মোদ্দা হিসেবে একেই বলে “ক্লাসিকাল অর্থনীতি”। কিন্তু বিংশ শতকের শুরুতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়।
আমরা সবাই জানি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯১৯ সালে, “ভার্সাই চুক্তি” নামের একটা বালখিল্য ব্যবস্থার দ্বারা যুদ্ধের সমস্ত দায়ভার জার্মানির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই অপমানজনক চুক্তির পরিণতি ছিলো সুদূরপ্রসারী এবং এই চুক্তি ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ হলো, তখন দেখা গ্যালো, অর্থনৈতিক জগৎ দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
একটা ভাগে ক্যাপিটালিস্ট বাজারনির্ভর অর্থনীতির মূল তত্ত্বগুলোকে সামান্য পরিবর্তন করে নিয়ে নাম দেওয়া হলো নিও-ক্লাসিকাল বা নব্য-ক্লাসিকাল অর্থনীতি। আরেক ভাগে বলা হলো, “পয়সার জোর যার, বাজার তার”— ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতির এই অবধারিত নিয়মটা সমাজে মারাত্মক অসাম্য তৈরি করেছে। বড়লোক মালিক আর গরীব কর্মচারীর মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং ক্যাপিটালিস্ট অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে সমাজতান্ত্রিক (সোশ্যালিস্ট) অর্থনীতিকে মান্যতা দেওয়া হলো।
এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নিয়মকানুনের মুখ্য প্রণেতা যে ছিলেন কার্ল হেইনরিখ মার্ক্স নামের একজন লন্ডনপ্রবাসী জার্মান ভদ্রলোক, এই কথাটা আলাদা করে না বললেও চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, গত শতকের একটা বড়ো সময়জুড়ে বাজারতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি— এই দুই নীতির তাত্ত্বিকরা পরস্পরের মধ্যে হাতাহাতি করে কাটিয়েছেন। হাতাহাতিতে কারও জয়লাভ হয়নি বটে, কিন্তু একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বোঝা গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো, এই দুই অর্থনীতির কোনোটাই সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব দ্যায় না। সাধারণ মানুষ মানে আপনি, আমি, এবং আমাদের মতো গুরুত্বহীন মানুষশাবকের দল। ক্যাপিটালিজম চায় বড়লোকরা আরো বড়লোক হোক। বাজারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাক। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চায় গভর্নমেন্টের হস্তক্ষেপে দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন হোক (“উন্নয়ন” শব্দটা শুনলে আমার আজকাল ভয় লাগে)। ধনী-গরীব ভেদাভেদ ঘুচে যাক। কিন্তু সোশ্যালিস্ট অর্থনীতিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বিশেষ মূল্য নেই! এখানেই প্রশ্ন ওঠে, আমি কী চাই? দেশের উন্নতি হলে আমার কী ঘোড়ার ডিম হবে?
এইখানে অনেকে বলবেন, এটা একটা কথা হলো? দেশের উন্নতি হলে তো সেই দেশের মানুষেরও উন্নতি হবে। আচ্ছা সত্যিই কি তাই? উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, ভারতের সামগ্রিক GDP বৃদ্ধি পেলে কিংবা সরকারি হিসেব অনুযায়ী মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি পেলেই কি ধরে নিতে হবে যে দেশের সকল মানুষের মধ্যে সম্পদের সমান-সমান বণ্টন হয়েছে? দেশের সব মানুষ একইরকম সুবিধে ভোগ করছে? এই বিষয়টা নিয়ে নতুন করে তর্ক করার প্রয়োজন নেই, কারণ রাষ্ট্রের GDP'র হিসেব আর রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের অবস্থার মধ্যে যে অনেক ফারাক আছে, সেটা এখন একটা শিশুও বুঝে গেছে।
এই দুইরকম প্রচলিত অর্থব্যবস্থার পাশাপাশি, ধীরে ধীরে উঠে এসেছে তৃতীয় একটি বিকল্প। অমর্ত্য সেন যখন অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করার জন্যে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছিলেন, ঠিক সেই সময়ে এই তৃতীয় বিকল্পটি নিয়ে তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। গত শতকের তিরিশের দশকে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময়ে, জন মেইনার্ড কেইন্স নামের একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ এই তৃতীয় বিকল্পটির বীজ বপন করেছিলেন।
বিলেত যাওয়ার আগে, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশুনা করার সময় থেকেই অমর্ত্য সেন এই বিকল্প তত্ত্বটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছিলেন, বইপত্র পড়েছিলেন। আত্মজীবনীতে তিনি নিজেই মন্তব্য করেছেন, কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় তাঁর চিন্তাজগতের নায়ক ছিলেন ইতালীয় অর্থনীতিবিদ পিয়েরো স্রাফা (Piero Sraffa)। এই স্রাফা ছিলেন জন মেইনার্ড কেইন্সের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কেমব্রিজে পড়াশুনা করতে গিয়ে অমর্ত্য সেন পিয়েরো স্রাফাকেই নিজের অ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পেলেন। কেমন সৌভাগ্যের কথা!
নিজের এই সৌভাগ্যকে অমর্ত্য সেন পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়েছিলেন। আমি এর আগেও অমর্ত্য সেনের বিভিন্ন লেখাতে পড়েছি, তিনি বাঙালির আড্ডা-আলোচনা-তর্ক-বিতর্কের জাতিগত স্বভাবটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে থাকেন। তর্কবিতর্ক বা argument হলো ভারতের চিরাচরিত দার্শনিক বিচার ও শিক্ষাপদ্ধতির একটি সুপ্রাচীন প্রকরণ। বইতে অসংখ্যবার তিনি উল্লেখ করেছেন, জীবনের শুরুতে শান্তিনিকেতনে এবং তারপর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফিহাউস এবং অন্যান্য আড্ডার আসরগুলো তাঁর নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং চিন্তাক্ষমতার বিকাশে কতটা অবদান রেখেছিল।
কেমব্রিজে পড়াশুনা করতে গিয়েও তিনি সমগোত্রীয় একটি সুস্থ বিতর্কের পরিবেশ লাভ করেছিলেন। যেখানে সম্পূর্ণ বিপরীত মতবাদের মানুষরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মগ্ন হন— শুধুই তর্কে জয়লাভ করার উদ্দেশ্যে নয়— বরং তাঁদের নিজস্ব ধারণাকে আরো প্রখর করে তোলার উদ্দেশ্যে। নতুন কিছু শেখার উদ্দেশ্যে। এই আড্ডা-আলোচনার প্রসঙ্গেই অমর্ত্য সেন শুনিয়েছেন তাঁর শিক্ষা এবং কর্মজীবনের অগণিত শিক্ষক, বন্ধু, সহপাঠী এবং ছাত্রদের বৃত্তান্ত। তাঁদের বিচিত্র চিন্তাভাবনার কথা। এটাই অমর্ত্য সেনের এই আত্মজীবনীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
বইটি পড়তে পড়তে আমার বারবার মনে হয়েছে, মুক্ত, উদার এবং গঠনমূলক আলোচনার সেই লোভনীয় জগৎটা আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। বদলে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় troll, meme, status, tweet, post-ভিত্তিক একটা অসুস্থ, অগভীর এবং চটকদার চিন্তাব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যে যতো বেশি তাৎক্ষণিক চটক বিতরণ করতে পারে, যে যতো বেশি মানুষকে আঘাত দিতে পারে, বাঁকা কথা বলতে পারে, সে তত like কিংবা ফলোয়ার লাভ করে (এবং এতেই তাদের মোক্ষলাভ ঘটে)। আমরা এখন চিন্তার “আদান-প্রদান” করিনা, শুধুই “প্রদান” করি। এবং আমাদের নিজের মতামতের সঙ্গে যাদের মতের মিল হয়না, তৎক্ষণাৎ তাদের গর্দান নিয়ে নিই। I am so cool and the rest is fool. সবকিছুই অবশ্য কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনের পিছনে মুখ লুকিয়ে করা হয়।
যাই হোক, এই বইটির আরেকটা বড়ো প্রাপ্তি হলো, অর্থনীতির সেই তৃতীয় বিকল্পটি যখন ধীরে ধীরে মূলস্রোতে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে, সেই সময়টার এবং সেই পরিবেশটার প্রত্যক্ষ বিবরণ দিয়েছেন অমর্ত্য সেন। তিনি নিজেও সেই তৃতীয় বিকল্পটির সঙ্গে নিজের চিন্তা এবং কর্মজীবনকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছিলেন। তৃতীয় বিকল্পটির নাম : “কল্যাণমূলক অর্থনীতি” (welfare economics)। এই অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হলো, এতে পুঁজি, বাজার, উন্নয়ন, রাষ্ট্র, মুনাফা, এইসবকিছুর বাইরেও আরেকটা বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তার নাম - মানুষ। মানুষ মানে শুধুই গোটা মানবসমাজ নয়, একজন একক ব্যক্তিমানুষকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। “A stupid common man!”
গোটা সমাজ কী চাইছে, ক্যানো চাইছে, কীভাবে আচরণ করছে— তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন একক মানুষ কী চাইছে, ক্যানো চাইছে, কীভাবে আচরণ করছে। কারণ আমাদের প্রত্যেকের অনেকগুলো আলাদা আলাদা পরিচয় আছে। এবং প্রতিটা পরিচয়ের স্বতন্ত্র মূল্য আছে। আপনি একইসঙ্গে একজন বাঙালি, হিন্দু, মেয়ে, গ্র্যাজুয়েট, বেকার, কবি, অমুকের প্রেমিকা, অমুকের ভগিনী, তমুকের কন্যা, সমকামী, ঈশ্বরবিশ্বাসী এবং আর্জেন্টিনা ফুটবল টিমের সমর্থক হতে পারেন (পরিচয়ের সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে)। অন্য কেউ না-বুঝুক, আপনি জানেন, আপনার কাছে এই প্রতিটি পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সমগ্র জীবন, আপনার কাজকর্ম, আপনার সিদ্ধান্ত, আপনার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতকে চালনা করছে আপনার এই পরিচয়গুলো। এগুলো একটাও বাদ দেওয়া যাবে না।
অর্থনীতির উপর মানুষের এই স্বতন্ত্র ব্যক্তিপরিচিতি এবং ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ কীভাবে প্রভাব ফ্যালে? খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, এটাই ছিল অমর্ত্য সেনের মৌলিক গবেষণার বিষয়। যেখানে একটা দেশের মানুষের সামগ্রিক পছন্দ-অপছন্দের হিসেবনিকেশ করাই একটা মুশকিলের ব্যাপার, সেখানে মাত্র একজন মানুষকে ক্যানো গুরুত্ব দেওয়া হবে? কারণ, গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এটাই কল্যাণমূলক অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য।
মানুষের এই ভিন্ন-ভিন্ন পরিচয়গুলোকে যখন আলাদা-আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়না, তখনই আমরা কাউকে “সে একজন মুসলমান” কিংবা “সে একজন ভারতীয়” কিংবা “সে একজন নাস্তিক” কিংবা “সে একজন নিরামিষাশী” কিংবা “সে একজন ব্রাজিল ফুটবল দলের সমর্থক”— এইরকম ভাঙাচোরা পরিচয়ে ডাকতে শুরু করি। ডাকলেও অসুবিধে নেই, অসুবিধে হলো, তাদের ভাঙাচোরাভাবে বিচার করতে শুরু করি। তখনই শুরু হয় ঝামেলা। তখনই আমরা আক্রমণাত্মক হয়ে যাই। তখনই আমরা ক্ষুদ্র হয়ে যাই। তখনই আমরা “holier than thou” হয়ে যাই। তখনই আমরা বলি : লোকটা নামাজ পড়ছে, তার মানেই ব্যাটা মুসলমান। আর মুসলমান মানেই... সে শুধুই মুসলমান। তার আর কোনও পরিচয় নেই! আর কোনো সত্তা নেই! কিচ্ছু নেই! গোটা মানুষটার বাকি সব পরিচয় তখন উবে গেছে। রয়ে গেছে শুধু একটা শব্দ। “মুসলমান”।
এই বিচ্ছিরিরকমের বড়ো একটা রিভিউ লিখেও, অত্যন্ত সুলিখিত এই বইটির সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে পারলাম না। ব্যক্তিগতভাবে এই বইটি পড়ার পরে আমি ভীষণরকম সমৃদ্ধ হয়েছি। আমার চিন্তা মার্জিত হয়েছে। অর্থনীতি আমার অন্যতম একটি আগ্রহের বিষয়। অমর্ত্য সেনের চিন্তা এবং কাজকেও আমি অনেকদিন যাবৎ জানার চেষ্টা করে আসছি। একটা হারিয়ে যাওয়া সময়, একটা হারিয়ে যাওয়া জগৎ, কয়েকজন হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বল মানুষ এবং তাঁদের চিন্তাভাবনা এবং আজকের এই জটিল উদ্ভট সময়ের মধ্যে একটা মিসিং লিঙ্ক হয়ে থাকবেন অমর্ত্য সেনের মতো ব্যক্তিত্বরা। যাঁদের সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। চারশো পৃষ্ঠার বইতে কারোর প্রতি অসূয়া কিংবা বিদ্বেষ প্রকাশ করেননি তিনি। একবারের জন্যেও “নোবেল পুরস্কার” শব্দটি উচ্চারণ করেননি। পুরো বই জুড়ে ছড়িয়ে ছিলো একটা রসিকতাময় বিদগ্ধ বিনম্র আলো। বইটা শেষ করে খেয়াল হলো, “বিনয়”— এই শব্দটা শুধু বিদ্বান ব্যক্তিদের মানায়। আজকের এই ট্রল, স্ট্যাটাস, রিল, মিম-সংস্কৃতিতে এই গভীর ব্যঞ্জনাময় শব্দটির কোনও জায়গা নেই! জায়গা থাকার কথাও নয়!
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশিবিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথাতুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা—নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।