Ratings7
Average rating4.1
Based on the remarkable true story of Helen Keller and her teacher Annie Sullivan, this inspiring and unforgettable play has moved countless readers and become an American classic. Young Helen Keller, blind, deaf, and mute since infancy, is in danger of being sent to an institution because her inability to communicate has left her frustrated and violent. In desperation, her parents seek help from the Perkins Institute, which sends them a "half-blind Yankee schoolgirl" name Annie Sullivan to tutor their daughter. Despite the Kellers' resistance and the belief that Helen "is like a little safe, locked, that no one can open," Annie suspects that within Helen lies the potential for more, if only she can reach her. Through persistence, love, and sheer stubbornness, Annie breaks through Helen's walls of silence and darkness and teaches her to communicate, bringing her into the world at last. - Back cover.
Reviews with the most likes.
হেলেন কেলারের নাম আজ আমরা কে না জানি? মাত্র ১৯ মাস বয়সে শ্রবণ, ও দৃষ্টিশক্তি হারানো হেলেনই পরবর্তীতে পৃথিবীর সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষদের একজন হয়েছেন। যে মানুষ একইসাথে অন্ধ এবং বধির, তাঁর জীবনটিকে আমরা অর্থহীন বলেই ধরে নেই, অথচ ৮৭ বছরের ভীষণ অর্থবহ পূর্ণ এক জীবন কাটিয়ে হেলেন আজ বহু মানুষের কাছেই এক আলোকবর্তিকা-স্বরূপ। আরো অনেকদিনই সম্ভবত তিনি প্রাসঙ্গিক থাকবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রী অর্জন করা আমেরিকার প্রথম ডেফব্লাইন্ড (অন্ধ ও বধির) ব্যক্তি হিসেবে হেলেন আজ স্বীকৃত। দীর্ঘ জীবনে তিনি ১৪টি বই আর শতাধিক প্রবন্ধ ও বক্তব্য লিখেছেন। বিশ্ব শান্তি, প্রাণী-অধিকার, মহাত্না গান্ধী, নারীদের যাতনা...কী নিয়ে লিখতে বাকি রেখেছেন তিনি? হেলেনের জন্ম আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে, ১৮৮০ সালে, এর মাত্রই দেড় দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ সামলে উঠেছে। অতো আগে জন্ম নেয়া একজন মানুষ এতগুলো প্রতিবন্ধকতা সামলে কী করে অমন অনুপ্রেরণাদায়ী একজন হয়ে উঠলেন? কোনো অলৌকিক ক্ষমতা কি রয়েছে এর পেছনে? কোন্ জাদুমন্ত্রবলে হেলেন অমন একজন সুপারহিরো হয়ে উঠলেন?
মার্ভেল কমিক্স-এর অন্ধ সুপারহিরো ডেয়ারডেভিলের কথা তো আমরা অনেকেই জানি। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও মারপিটে কোথাও পিছিয়ে নেই তিনি; দারুণ সংবেদনশীল ইন্দ্রিয়শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিত্যই তিনি দুষ্টের দমন করে চলেছেন। তবে মুখোশের আড়ালের ম্যাট মারডক অমন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মারকুটে ভিজিল্যান্টি হয়ে উঠতে পারতেন না যদি না স্টিকের কাছ থেকে তিনি মারপিট, ও ইন্দ্রিয়শক্তিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা শিখতেন। স্টিকের প্রশিক্ষণেই ম্যাট হয়ে ওঠেন অজেয় ডেয়ারডেভিল।
হেলেন কেলারের ব্যাপারটিও কিছুটা অমনই! তাঁর জীবনেও স্টিকের মতো একজন শিক্ষক ছিলেন, যাঁর জীয়নকাঠির স্পর্শে রাতারাতি পাল্টে যায় হেলেনের জীবন। এই মানুষটির নাম অ্যান সালিভান। হেলেনের জীবনে অ্যান না এলে কী হতো বলা মুশকিল, হয়তো আর দশজন সাধারণ হতভাগ্য প্রতিবন্ধীর মতোই অন্ধকারে ঢাকা দুঃসহ এক জীবন কাটাতে হতো তাঁকে, পৃথিবী পেতো না হেলেন কেলারকে। দ্যা মিরাক্ল্ ওয়ার্কার নাটকটি এই অ্যান সালিভানকে নিয়েই, যিনি হেলেনের জীবনে সত্যিকার এক মিরাক্ল্ হয়ে আসেন। তবে শুধু অ্যান সালিভান-ই নন, হেলেনের জীবনে বড় ভূমিকা রেখেছেন আরো কয়েকজন সুপারহিরো। বাস্তবের সেই সুপারহিরোদের বন্দনাই এ লেখার মূল উদ্দেশ্য!
হেলেন কেলারের ৬ বছর বয়সের সময় অ্যান সালিভান তাঁর জীবনে আসেন, পরবর্তী ৪৯ বছর অ্যান হেলেনের হাতে হাত রেখে তাঁকে আগলে গেছেন। অ্যালাবামার প্রত্যন্ত এক গ্রামে হেলেনের জন্ম, যেখানে এমন অন্ধ ও বধির শিশুর পরিচর্যার কোন ব্যবস্থা ছিলো না, ছিলো না হেলেনকে নতুন কিছু শেখাবার উপায়ও। বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগে সম্পূর্ণ অপারগ হেলেন বড় হয়ে উঠছিলেন ভীষণ একগুঁয়ে, জেদী, এবং মারকুটে স্বভাব নিয়ে। উইলিয়াম গিবসনের এ নাটকে হেলেনের বুনো স্বভাবটি বারবার উঠে আসে; কোন কিছু পছন্দ না হলেই হেলেন অন্ধ আক্রোশে হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করে, চারপাশের সবাইকে কিল-লাথি-ঘুষি-খামচি মেরে জেরবার করে তোলে। কন্যার চিন্তায় পাগলপারা আর্থার এবং কেটি কেলার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চিঠি পাঠাতে থাকেন, এমন কোন উপায় কি কেউ বাতলে দিতে পারেন যাতে হেলেনকে একটু সামলে রাখা যায়? ন্যূনতম প্রাথমিক পর্যায়ের একটি যোগাযোগের মাধ্যম স্থাপন করা যায়? “হোপলেস” এই শিশুটির কোন একটা গতি করে দেবেন এমন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কি আদৌ আছে কোথাও?
১৮২৯ সালে ম্যাসাচুসেটস-এ প্রতিষ্ঠিত হয় পার্কিন্স ইন্সটিটিউশন ফর দ্যা ব্লাইন্ড, যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে লরা ব্রিজম্যান পড়তে ও লিখতে শেখেন, এবং উচ্চ শিক্ষাও অর্জন করেন। হেলেন কেলারের প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগেই সে যুগের হেলেন কেলার হয়ে ওঠেন লরা। পৃথিবীবাসী লরা ব্রিজম্যানের কথা জানতে পায় চার্লস ডিকেন্সের বরাতে; আমেরিকা ঘুরে এসে বিশেষতঃ পার্কিন্স ইন্সটিটিউশন এবং লরাকে নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ডিকেন্স ১৮৪২ সালে প্রকাশ করেন তাঁর অ্যামেরিকান নোটস। হেলেনের মা কেটি এ বইটি পড়ে লরার কথা জানতে পারেন, এবং আশায় বুক বেঁধে যোগাযোগ করেন টেলিফোনের জনক হিসেবে খ্যাত বিজ্ঞানী আলেকজাণ্ডার গ্রাহাম বেলের সাথে। বেল সে সময়টায় বধির শিশুদের নিয়ে গবেষণা করছিলেন; তিনি কেটির সঙ্গে পার্কিন্স থেকে সদ্য পাশ করা অ্যান সালিভানের পরিচয় করিয়ে দেন। বেল পরবর্তীতে নিজ গরজে ব্রেইল শিখে নিয়েছিলেন, হেলেনের সাথে চিঠি চালাচালি করবার জন্য।
ছবিঃ লরা ব্রিজম্যান। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
১৮৮৭-এর মার্চের ৫ তারিখ ২০ বছর বয়েসি অ্যান এসে উপস্থিত হন হেলেনের অ্যালাবামার বাড়িতে। দু পক্ষের প্রথম মোলাকাতটা খুব মসৃণ হয়নি। হেলেনের বাবা আর্থার আমেরিকান গৃহযুদ্ধে কনফেডারেসির হয়ে লড়াই করেছিলেন, তাঁদের বাড়িতে কৃষ্ণাঙ্গ কৃতদাসও ছিলো বেশ কয়েকজন। বিপরীতে, অ্যান সালিভান বড় হয়েছেন উত্তরে, ম্যাসাচুসেটস-এ, কৃতদাসদের মুক্তির পক্ষে লড়াই করা ইউনিয়ন-এর কেন্দ্রস্থল হিসেবে খ্যাত এ অঞ্চলটি। সম্পূর্ন বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দর্শন লালন করা এই মানুষগুলো কিন্তু শেষমেষ ঠিকই আক্ষরিক অর্থে এক ছাদের নিচে এসেছেন, হেলেনের জন্যই। অ্যান প্রথমেই লক্ষ্য করেন হেলেনের পরিবার হেলেনকে অতি আদরের এক ঘেরাটোপে আবদ্ধ রেখেছে, ছোট্ট হেলেন যা চায় তাই-ই পায়। নিজের প্লেট থেকে সে খায় না, টেবিলের চারপাশে হেঁটে বেড়ায়, আর হাতড়ে হাতড়ে সবার প্লেট থেকে খাবার তুলে নেয়। অ্যান নিজের প্লেট থেকে খাবার দিতে না চাইলে সে রাগ করে, মেঝেতে শুয়ে পা ঠোকে, বুনো চিৎকারে কানে তালা লাগিয়ে দেয়...। সব দেখেশুনে অ্যান রায় দেন, হেলেনকে তাঁর হাতে সম্পূর্ণভাবে তুলে দিতে হবে। পৃথিবীটা যে ফুলশয্যা নয়, ভীষণ কঠিন এক জায়গা, এখানে পদে পদে সংগ্রাম, ঠেকে ঠেকেই শিখে নিতে হয়-এই সত্যিটা হেলেনের মাথায় গেঁথে দেবার সঙ্কল্পে চোয়াল শক্ত করেন অ্যান।
ছবিঃ অ্যান, এবং হেলেন। আলেকজাণ্ডার গ্রাহাম বেলের তোলা (১৮৯৯)। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
হেলেনকে মনের ভাব প্রকাশ করতে শেখাবার জন্য অ্যান রীতিমতো মিলিটারী কায়দায় ট্রেনিং শুরু করেন। আমরা যারা চোখে দেখে, এবং কানে শুনে নতুন তথ্য আহরণ করি চারপাশ থেকে, আমরা হয়তো লক্ষ্যই করি না যে আমাদের আশেপাশের সবকিছুই আসলে বিশেষ্য, সবকিছুরই নাম রয়েছে (যেমনঃ পানি, টেবিল, প্লেট...ইত্যাদি)। অ্যান শুরুতেই হেলেনকে এই বিশেষ্য চেনাবার কাজে নামেন। কোন একটি বস্তু (যেমনঃ পুতুল) হাতে ছুঁইয়ে এরপর সেই বস্তুটির নাম হাতের স্পর্শে বানান করে করে (D-O-L-L) শেখানো শুরু করেন। যে কায়দায় বানানের এ শিক্ষাটি তিনি দেয়া শুরু করেন, এর নাম ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট (manual alphabet)। বিশেষতঃ বধিরদের শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে এই ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট, কিংবা ফিঙ্গার অ্যালফাবেট বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। প্রায় ৪০ ধরণের ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট-এর চল রয়েছে হালের সময়ে, তবে ইংরেজি ভাষা যেমন গোটা বিশ্বের লিঙ্গুয়া ফ্র্যাঙ্কা হয়ে উঠেছে, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের জগতে তেমনি লিঙ্গুয়া ফ্র্যাঙ্কা হয়ে উঠেছে ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেটের আমেরিকান সংস্করণ অ্যামেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয়েই এ বিষয়টির ওপর পড়াশোনা করে স্নাতক, এবং স্নাতোকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি নেয়া যায়।
ছবিঃ অ্যামেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে ব্যবহৃত বর্ণমালা ও সংখ্যা। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
আকার ইঙ্গিতের মাধ্যমে মানুষ তো আসলে হাজার হাজার বছর ধরেই মনের ভাব প্রকাশ করে আসছে, তবে এভাবে আঙ্গুলের ভাঁজে বর্ণমালা ফুটিয়ে একটি একটি করে শব্দ বানিয়ে আস্ত একটি বাক্য তৈরী করার ইতিহাস কিন্তু খুব পুরনো নয়। স্প্যানিশ শিক্ষাবিদ হুয়ান পাবলো বনেত ১৬২০ সালে একটি বই প্রকাশ করেন যেখানে তিনি ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট ব্যবহারের পদ্ধতি বিশদে আলোচনা করেন। ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট-এর ওপর এটিই প্রথম প্রকাশিত বই। পরবর্তীতে ১৮ শতকে ফরাসী শিক্ষাবিদ শাখলে মিশেল দ্যু লেপে বনেত-এর এই বর্ণমালাটি ব্যবহার করা শুরু করেন বধিরদের কাছে বাইবেলের বাণী প্রচার করার উদ্দেশ্যে। দ্যু লেপে বিশ্বাস করতেন বধিরদের কাছে ঈশ্বরের বাণী পৌঁছে দিলে তাদেরও আত্নার পরিত্রাণ ঘটানো সম্ভব, স্রেফ বধির বলেই কেউ স্বর্গে যেতে পারবে না তা কিছুতেই হতে পারে না! এই ভাবনা থেকেই ১৭৬০ সালে প্যারিসে তিনি পৃথিবীর প্রথম বধিরদের শিক্ষালয় স্থাপন করেন, যেখানে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করা হতো। দ্যু লেপের দেখানো পথে লেখাপড়া শিখে বধিররা মানব ইতিহাসে প্রথম বারের মতো আদালতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করা শুরু করেন। চোখে পানি এনে দেবার মতো ব্যাপার, তাই না?
ছবিঃ হুয়ান পাবলো বনেত-এর প্রস্তাবিত ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট (১৬২০)। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
অ্যান সালিভান তো ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট ও ব্রেইলের মাধ্যমে হেলেনকে লেখাপড়া শেখালেন, এবার হেলেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পালা। হেলেন পড়েছেন র্যাডক্লিফ কলেজে যা বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। র্যাডক্লিফ কলেজে পড়বার সুযোগ পেলেও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না হেলেন। ঠিক এ সময়েই এগিয়ে আসেন আরেকজন মহান লেখকঃ স্যামুয়েল লংহর্ন ক্লেমেন্স, যাঁকে আমরা মার্ক টোয়েন নামে জানি। টোয়েনের নিজের তখন অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্গিন, কিন্তু হেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না জেনে তিনি পত্রাঘাত করেন তাঁর ধনকুবের বন্ধু স্ট্যান্ডার্ড অয়েল-এর কর্ণধার হেনরি হাটলস্টন রজার্সকে। টোয়েনের অনুরোধেই হেনরি হেলেনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সকল ব্যায়ভার বহন করেন। অ্যান সালিভানকে যে আজ আমরা মিরাক্ল্ ওয়ার্কার হিসেবে জানি, এই উপাধিটিও মার্ক টোয়েনেরই দেয়া। উইলিয়াম গিবসন এ নামে নাটক লিখে টোয়েনের দিকে চোখ টিপ মেরেছেন কার্যত।
অ্যান সালিভান যে হেলেনকে শুধু ব্রেইলের মাধ্যমে পড়তে, এবং ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট-এর মাধ্যমে কথা “বলতে” শিখিয়েছেন, তা নয়, কথা শুনতেও শিখিয়েছেন! সালিভান যে প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ে এসেছেন, সেই পার্কিন্স ইন্সটিটিউশন-এর একজন শিক্ষক সোফি অ্যালকর্ন বধিরদের জন্য কথা শোনার একটি পদ্ধতি দাঁড় করিয়েছিলেন, যেটিকে ট্যাডোমা মেথড বলা হয়। এ পদ্ধতিতে বধির ব্যক্তি যিনি কথা বলছেন, তাঁর গলায়, ঠোঁটে, ও নাকে আঙুল রেখে শব্দের কম্পন থেকে কথা “শুনে” নিতে পারেন। অ্যান কীভাবে হেলেনকে কথা শুনতে শিখিয়েছেন তার একটি ভিডিও এখানে জুড়ে দিলাম। ১৯২৯ সালে ধারণকৃত এ ভিডিওটি সাদাকালো, কিন্তু অ্যানের কথা “শুনে” তা বুঝতে পেরে হেলেনের মুখে যে হাসি ফুটে ওঠে, তা যেন ভিডিওটিকে প্যালেটের সবগুলো রঙে রাঙিয়ে দেয়! শুধু তাই নয়, যে ধৈর্য, মমতা, আর একাগ্র নিষ্ঠার সাথে ৪৯ বছর ধরে অ্যান কাজ করে গেছেন হেলেনের জন্য, তার সামান্য একটু পরিচয়ও উঠে আসে মিনিট তিনেকের এই ভিডিওটিতে।
গিবসনের এ নাটক অবলম্বনে চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে, অস্কারও জিতেছে তা। ১৯৫৭ সালে লেখা এ নাটক আজও নিয়মিতই মঞ্চস্থ হয়। মঞ্চে অভিনয় অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ, এ নাটকে হেলেনের চরিত্রে অভিনয় করা সে চ্যালেঞ্জটিকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। নাটকের মারকুটে, বুনো হেলেন কথায় কথায় তেড়ে আসে, মেঝেতে শুয়ে প্রচণ্ড ক্রোধে পা ঠোকে, আবার হাতে পানি স্পর্শ করে ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেটের মাধ্যমে বানান করে W-A-T-E-R লিখতে শিখে বাঁধভাঙা খুশীতে আত্নহারা হয়ে ওঠে...এ চরিত্র মঞ্চে ঠিকঠাকভাবে ফুটিয়ে তোলা যেন আরেক মিরাক্ল্-এর দাবীদার। কানাডার বিশপ'স ইউনিভার্সিটির ড্রামা ডিপার্টমেন্ট ২০২০ সালে নাটকটি মঞ্চস্থ করে, দুর্দান্ত সে পার্ফর্ম্যান্সটি এখানে জুড়ে রাখলাম। কারো হাতে ঘন্টা দুয়েক সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন।
অন্ধত্ব, বধিরতা, কিংবা বাকশক্তিহীনতা-এই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে জয় করবার রাস্তা মানুষ বের করে নিয়েছে। শুধু এখানেই তো শেষ নয়, ম্যানিউয়াল অ্যালফাবেট, ব্রেইল, কিংবা ট্যাডোমা মেথডের সেই দিনগুলো ফেলে গত কয়েকশ বছরে বিজ্ঞান আরো বহু বহু দূর এগিয়ে গেছে। মানুষ এখন শ্রবণশক্তি ফিরে পাচ্ছে, পাচ্ছে চোখের দৃষ্টিও। যাঁদের চোখ একেবারেই ভালো হবার নয়, তাঁদের জন্যও আছে সুখবর। হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য (গ্রাফ, চার্ট, ছবি ইত্যাদি) বুঝে নেয়া, চলচ্চিত্র দেখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা, জাদুঘরে ভার্চুয়ালি ঘুরে আসা...এই সবই এখন ধীরে ধীরে সত্যি হয়ে উঠছে!
এত এত এত সব বকবকবকবকানির কারণ নিজেকে এবং নিজের বন্ধুদের আশা যোগানো! আমরা যদি কেউ দৈবাৎ কোন দূর্ঘটনায় কখনো অন্ধ বা বধির হয়ে পড়ি, আমরা যেন হাল না ছাড়ি। আমরা যেন কিছুতেই ভুলে না যাই, আমাদের চারপাশেই আমাদের অলক্ষ্যে বাস্তবের সুপারহিরোরা কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা যেন তাঁদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠি। হয়তো একদিন আমরাও সুপারহিরো হয়ে উঠতে পারি, কে জানে!